সম্মানিত ভিজিটর সুদ ও মুনাফার পার্থক্য সুদ খেলে কি নামাজ হবে? এবং সুদ কাকে বলে সুদ সম্পর্কিত সকল মাসয়ালা ও আলোচনা করা হলো
সুদ কি? সুদ কাকে বলে?
রিবা (আভিধানিক অর্থঃ বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন, বেশি, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি), যা উশুরি হিসেবেও পরিচিত, তা হল একটি আরবি শব্দ, যা ইসলামী পরিভাষায় সুদকে বোঝায়।
ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত
মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে।
তাফসিরবিদ ইবনে জারীর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, জাহেলিয়াহ আমলে প্রচলিত ও কুরআনে নিষিদ্ধ ‘রিবা’
হল কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা।
আরবেরা সে যুগে তা-ই করতো এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সুদ বাড়িয়ে দেবার শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে দিত।
সুদ সম্পর্কে কুরআন কি বলে?
কুরআন ও নিষেধাজ্ঞাসম্পাদনা
কুরআনে সর্বমোট ২০ টি আয়াত রয়েছে যাতে সুদের উল্লেখ রয়েছে।[৪] যদিও এই ২০ টি আয়াতের সবগুলোতেই শব্দগতভাবে সরাসরি এর উল্লেখ নেই।
শব্দটি কুরআনে সরাসরি ৮ বার উল্লেখিত হয়েছে — তিনবার সূরা বাকারা (২): ২৭৫ নং আয়াতে ও একবার করে সূরা বাকারা (২): ২৭৬ নং আয়াত,
সূরা বাকারা (২): ২৭৮ নং আয়াত, সূরা আল-ইমরান (৩): ১৩০ নং আয়াত, সূরা নিসা (৪): ১৬১ নং আয়াত এবং সূরা আর-রুম (৩০): ৩৯ নং আয়াতে।[৫]
সূরা আর-রুমের একটি মাক্কী আয়াতে সর্বপ্রথম বিষয়টি অবতীর্ণ হয়
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।
পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে। (কুরআন ৩০:৩৯)[৬]
সুদ সম্পর্কে মদিনায় অবতীর্ণ আয়াত
বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল — তাদের
পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন।
আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ
কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে।
বস্তুতঃ আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক শাস্তি। কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও
ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে।
আর যারা সালাতে অনুবর্তিতা পালনকারী, যারা যাকাত দানকারী এবং যারা আল্লাহ ও কিয়ামতে আস্থাশীল।
বস্তুতঃ এমন লোকদেরকে আমি দান করবো মহাপুণ্য। (সূরা নিসা কুরআন ৪:১৬০-১৬২)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (সূরা আলে-ইমরান কুরআন ৩:১৩০)
সুদ সম্পর্কে পরবর্তী পর্যায়ে সূরা বাকারায় বিস্তারিত আয়াত অবতীর্ণ হয়:
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আছর করে
মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেওয়ারই মত।
অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।
অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার।
তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন।
আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো অবিশ্বাসী পাপীকে।
নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, সালাত প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে,
তাদের জন্যে তাদের পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোনো শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।
অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো,
তবে তোমরা নিজেদের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারো প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।
যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত।
আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা তা উপলব্ধি করো। (কুরআন ২:২৭৫-২৮০
সুদ সম্পর্কে নবীজির হাদিসে
ফারহাদ নোমানি, আব্দুল কাদের থমাস এবং এম. ও. ফারুকের ন্যায় পণ্ডিতগণ দাবি করেছেন যে, প্রাথমিক
যুগের পণ্ডিতগণ এই বিশ্বাস করতেন যে রিবাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য হাদিস খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।
এম. ও. ফারুক বলেছেন যে, হাদিসে রিবার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্যটি খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রচলিত।
তাই উক্ত বক্তব্য অনুসারে, সকল প্রকার সুদই ‘রিবা’ এবং তা ইসলামী আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ
এই কথার লিখিত প্রমাণ হাদিসের উপর ভিত্তি করে বলা হয়।
উসমানী কর্তৃক উপস্থাপিত কিছু হাদিস, যেগুলো ঋণের মূল পরিমাণের উপর যে কোনো প্রকারের বর্ধিতকরণকে
নিষিদ্ধ করেছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস হল নিম্নরূপঃ
সুদ সম্পর্কে হাদিস ১
“প্রত্যেক ঋণ যা লাভ প্রদান করে তা হল এক প্রকার ‘রিবা’।”
সুদ সম্পর্কে হাদিস ২
“যদি কেউ কাউকে ঋণ দেয় এবং ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণদাতাকে এক গামলাপূর্ণ (খাবার) প্রস্তাব করে, তবে
ঋণদাতার তা গ্রহণ করা উচিত নয়; অথবা ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণদাতাকে তার পশুতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রস্তাব
দেয়, ঋণদাতা যেন কখনোই সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করে।
ফরহাদ নোমানির মতে, ফিকহ পাঠশালা গুলোর মধ্যে, প্রাচীন হানাফি পণ্ডিত, কিছু বিখ্যাত শাফি পণ্ডিত
(উদাহরণ, আল-রাযি) ও মালিকি (উদাহরণ, ইবনে রুশদ) মত ব্যক্ত করেন যে, রিবা বিষয়টি কুরআনে
একটি অস্পষ্ট (মুজমাল) পরিভাষার ন্যায় ছিল, শাব্দিক অর্থের মাধ্যমে এর অর্থ পরিষ্কার হচ্ছিল না, এবং তাই সে
সময় এর অস্পষ্টতা পরিষ্কার করবার জন্য প্রয়োজন ছিল ‘প্রচলিত’ ঐতিহ্যের (আরবি ভাষায় হাদিসের আরেক প্রতিশব্দ ‘ঐতিহ্য’)
বিভিন্ন সূত্রে রিবা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকারের ও বিভিন্ন সংখ্যক হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। ফরহাদ নোমানির
মতানুযায়ী, রিবা সম্পর্কে প্রধানত তিন প্রকারের মৌলিক হাদিস রয়েছে
হাদিসের সংকলন হতে প্রাপ্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সনদ অনুযায়ী, রিবা তখনই সংঘটিত হয় যখন একই প্রকারের
ছয়টি নির্দিষ্ট পণ্য অসমভাবে বিনিময় করা হয় অথবা তাৎক্ষনিকভাবে সরবরাহ করা না হয়।(দেখুন রিবা আল-ফজল)
সুদ সম্পর্কে হাদিস ৩
ইবনে আব্বাস হতে উদ্ধৃত ও বর্ণিত আরো এক গুচ্ছ হাদিসে বলা হয়েছে, যে সকল মজুরি বা পণ্য সরবরাহতে বিলম্ব হয় তার সবই রিবা।
সুদ সম্পর্কে হাদিস ৪
তৃতীয় আরেক গুচ্ছ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তার বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন
“আল্লাহ তোমাদেরকে সুদ (রিবা) নিতে নিষেধ করেছেন, তাই রিবা সম্পর্কিত সকল বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হল।
এখন থেকে তোমাদের মূলধন তোমরাই রাখবে। তোমরা জুলুম করবে না, জুলুম ভোগও করবে না। আল্লাহ জারি
করেছেন যে, আর কোনো সুদ থাকবে না এবং এ কারণে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সকল সুদ রহিত করা হল।”
অনুরূপভাবে, এম. এ. খান বলেন যে, রিবা সম্পর্কিত তিন গুচ্ছ হাদিস রয়েছে, যার মধ্যে রিবা আল-ফজল ও
বিদায় হজ্ব অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত। আরেকটি উৎসে, আব্দুল কাদের থমাস বলেন যে, ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে যার
মাধ্যমে আমরা রিবাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারব। রিবা ইন হাদিস’ নামক গ্রন্থে, গ্লোবাল ইসলামিক
ফিন্যান্সের শারিক নিসার সাতটি সাধারণ হাদিস ও রিবা আল-নাসিয়াহ -এর উপর আরো ছয়টি হাদিসের তালিকা উদ্ধৃত করেন।
সুদ সম্পর্কে হাদিস ৫
জাবির আব্দুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ সহ বহু বর্ণনাকারী বলেছেন —
মুহাম্মাদ সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, এর হিসাবরক্ষক এবং এর সাক্ষী ― সকলের উপরই অভিসম্পাত করেছেন এই বলে যে, তারা সকলেই সমান।
ফারুক এক জোড়া হাদিস হতে উদ্ধৃতি দিয়ে উদাহরণ দেন যে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানে হাতে হাতে বিনিময় করা
হলে অথবা অপেক্ষা (নাসি’আহ) না করা হলে তা রিবা হবে না যা “রিবা আল-ফজলও সুদ বা রিবা”এই
সম্পর্কিত প্রথাগত অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক। উদাহরণঃ “হাতে হাতে” অসম পরিমাণে একই পণ্য বিনিময়।
(ফারুক টীকায় উদ্ধৃত করেন যে, একটি হাদিস যেখানে দুজন সাহাবা তর্ক করছেন, উবাদা বিন আল-সামিত
বলছেন, মুহাম্মাদ রিবা আল-ফজল নিষিদ্ধ করেছেন… যেখানে আরেক সাহাবী প্রথম মুয়াবিয়া তার সঙ্গে
মতবিরোধ করছেন এই বলে যে, তিনি কখনো মুহাম্মাদ -কে এমন ব্যবসা নিষেধ করতে শোনেন নি, “এমনকি
যদিও, আমরা তাঁকে (মুহাম্মাদ -কে) দেখেছি ও তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তবুও?
তাকি উসমানী দাবি করেন যে, রিবা সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিসগুলো অস্পষ্ট হতে পারে না কারণ আল্লাহ এমন
কোনো চর্চার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন না, যার প্রকৃত স্বরূপ মুসলমানদের জানা থাকবে না। তার মতে,
একমাত্র সেই আয়াতগুলোই অস্পষ্ট হতে পারে, যেগুলোর জন্য কোনো ব্যবহারিক সমস্যা সেগুলোর
জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না।[৩৬]
মূলধারার মুসলিমগণ সুদ খাওয়ার পাপের ভয়াবহতা তুলে ধরার জন্য বেশ কিছু হাদিসকে নির্দেশ করেন।
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত হয়েছে যে
রাসূল মুহাম্মাদ বলেন, “ছয়টি ধ্বংসাত্মক পাপ (কবিরা গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকো।” সাহাবারা জিজ্ঞেস করলো,
হে আল্লাহর রাসুল ! কী সেগুলো?” তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইবাদতে শরীক করা,
জাদুবিদ্যার চর্চা করা, (ইসলামী আইন অনুযায়ী) সৎ কারণ ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া,
এতিমের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ের সময় শত্রুর কাছ থেকে পিঠ দেখিয়ে পলায়ন করা, সতী-সাধ্বী
নারী ― যারা কখনো অশ্লীল কোনো কিছু চিন্তাও করে না এবং উত্তম মুমিনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা।
সুনান ইবনে মাজাহ অনুযায়ী, ইসলামের রাসূল মুহাম্মাদ রিবাকে নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করার চেয়েও নিকৃষ্ট
বলে ঘোষণা করেন। উক্ত হাদিসে তিনি বলেন, রিবার ৭০ টি পাপ। তন্মধ্যে নূন্যতম পাপ হল নিজ মায়ের সাথে
ব্যভিচার করা আর নিকৃষ্টতম রিবা হল কোন মুসলিমের সম্মান নষ্ট করা। আরেক হাদিসে মুহাম্মদ জেনেশুনে
এক দিরহাম সুদ খাওয়াকে ৩৬ বার ব্যভিচার করার সমতুল্য বলেন।
সুদের শর্ত সমূহ
১) লেনদেন ঋণ সংক্রান্ত বিষয় হওয়া।
২) মূলধনের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকা।
৩) ঋণ পরিশোধের সময়সীমা নির্দিষ্ট থাকা।
৪) ঋণ দানের শর্ত হিসেবে মূলধনের অতিরিক্ত কোনো কিছু আদায় করা।
৫) অতিরিক্ত যা কিছু আদায় করা হয় তার শরীয়াহ সম্মত কোনো বিনিময় না থাকা।
৬) অতিরিক্ত অংশের পরিমাণ পূর্ব নির্ধারিত হারে আদায় করা।
৭) সময়ের অনুপাতে মূলধনের অতিরিক্ত অংশের পরিমাণ নির্ধারিত হওয়া।
৮) উপরের শর্তগুলোকে লেনদেনের শর্ত হিসেবে গণ্য করা।
মুনাফার পরিচয় কি?
রিবহুন’ শব্দের প্রতিশব্দ হলো লাভ বা মুনাফা। ইসলামী শরিয়তে মুনাফা হচ্ছে ‘সম্পদের এমন প্রবৃদ্ধি, যা কোনো
অর্থনৈতিক কারবারে সম্পদ বিনিয়োগ করার ফলে অর্জিত হয়। উদ্যোক্তা প্রথমে বিনিয়োগকৃত অর্থকে পণ্যে
রূপান্তর করে, অতঃপর ওই পণ্য বিক্রয় করে পণ্যকে অর্থে রূপান্তর করে। এভাবে রূপান্তরিত অর্থ
বিনিয়োগকৃত অর্থের তুলনায় বেশি হলে উদ্যোক্তা লাভ পায় আর প্রাপ্ত অর্থ আগের তুলনায় কম হলে তার পুঁজি
কমে যায় বা তার লোকসান হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যবসায়ী ১০ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করে
১২ হাজার টাকায় বিক্রি করল। এখানে পুঁজি বৃদ্ধি পেয়েছে দুই হাজার টাকা। পুঁজির এ বর্ধিত অংশ হলো
মুনাফা বা লাভ। আর পুঁজি কমে গেলে তাকে বলা হতো লোকসান। ব্যবসায়ে লাভ-লোকসানের ক্ষেত্রে পুঁজিকে
পণ্যে রূপান্তর ও শ্রম বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও গ্রহণ করতে হয়।
সুদ ও মুনাফার পার্থক্য
এখানে উল্লেখ্য যে সুদের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি পায়, আবার ব্যবসায়ের মাধ্যমেও তা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ইসলামে
রিবা’র মাধ্যমে অর্জিত বৃদ্ধিকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে আর ব্যবসার মাধ্যমে বৃদ্ধিকে হালাল করা
হয়েছে। কেননা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে মূলধন ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়েছে এবং ঝুঁকি গ্রহণ করতে
হয়েছে। মূলধন ও শ্রম বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি গ্রহণের মাধ্যমে মূলধনের যে বৃদ্ধি তা-ই মুনাফা। এখানে আরো
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে ১০ টাকা ঋণ দেয় এ শর্তে যে এক দিন পরে তাকে ১১
টাকা দিতে হবে। এখানে অতিরিক্ত এক টাকা সুদ, যা ইসলামী শরিয়তে হারাম। বিপরীত পক্ষে, কেউ যদি হাট
থেকে ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি বেগুন কিনে অন্য বাজারে গিয়ে ১৫ টাকায় বিক্রি করে, তাহলে যে পাঁচ
টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাকে সুদ বলা যাবে না। এই পাঁচ টাকা লাভ, যা হালাল বলে গণ্য হবে।
সুদ ও মুনাফার পার্থক্য সংক্ষেপে
বলা যায় এভাবে—মুনাফা বেচাকেনা বা ব্যবসার স্বাভাবিক ফল থেকে আসে। বিপরীতপক্ষে, সুদ অর্জিত
হয় ঋণের ওপর। মুনাফা উদ্যোক্তার পুঁজি, শ্রম ও সময় বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি গ্রহণের ফল; কিন্তু সুদের ক্ষেত্রে
ঋণদাতা পুঁজি, শ্রম ও সময় বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি গ্রহণ করে না, অর্থ ধার দেয় মাত্র। মুনাফা অনির্ধারিত ও
অনিশ্চিত, কিন্তু সুদ পূর্বনির্ধারিত ও নিশ্চিত। মুনাফায় ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়, আর সুদে তা গ্রহণ করতে হয় না।
ব্যবসায় কোনো পণ্যের ওপর লাভ একেবারে নির্ধারণ করা যায়; কিন্তু একই মূলধনের ওপর বারবার সুদ নির্ধারণ ও আদায় করা যায়।
সুদ খেলে কি নামাজ হবে?
আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন উনার ইবাদৎ করার জন্য।ইবাদৎ করা আর পৃথিবীতে পরীক্ষা দেয়া
একই কথা। আল্লাহ একই কথা, দুই ভাবে বলেছেন। ইবাদতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ যেটা করতে বলেছেন সেটা
করা, আর যেটা নিষেধ করেছেন, সেটা না করা। পৃথিবীটা পরীক্ষার এটাও কুরআনের আয়াত। এখন
পরীক্ষার হলে আপনি খাতায় যাই লিখেন না কেন, আপনাকে কেউ নিষেধ করবে না। রেজাল্ট বের হবার
পর বুঝা যাবে কে পাস/ফেল করলো। আল্লাহ নিজে পবিত্র তিনি নিজে অপবিত্র কোন জিনিসই গ্রহন করবেন না।
সমস্ত নবী-রাসুলরা কি হারাম হালাল মেনে চলেননি? তাহলে সেটাই তো,
আল্লাহর পথ।সমস্ত কুরআনে তো এটাই আছে তোমরা সুদ,অবৈধ উপার্জনসহ সমস্ত খারাপ কাজ থেকে দূরে
থাক। হাদীসে আছে অবৈধ আয়ের সাথে জড়িত থাকলে মহান আল্লাহ তার দুয়া/কোন ইবাদৎ কবুল করবেন না।
অবৈধ আয় যদি ঠিক হোত তাহলে, মানুষের জীবন পৃথিবীতে অত্যন্ত সহজ হয়ে যেত। আর এত সহজ
জীবনের জন্য আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দিতেন না। পথ অত্যন্ত কঠিন বলেই, আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন।
কিছু মানুষকে দেখবেন, চাকুরীতে এরা বহু টাকা অবৈধ ভাবে আয় করতে পারে।কিন্তু অবৈধ কোন টাকাই
এরা গ্রহন করেনা।এদের দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত কঠিন।
সুদের ৭০ টি গুনাহ কি কি?
পূর্বের রাসূলগনের মধ্যেও সুদ হারাম ছিল এবং বর্তমানেও হারাম আছে, যা প্রত্যেক মুসলিম জানে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন: বস্তুত: ইয়াহুদীদের জন্যে আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পবিত্র বস্তু যা
তাদের জন্যে হালাল ছিল, তাদের পাপের কারনে এবং আল্লাহ্ পথ অধিক পরিমানে বাধা দেয়ার দরুন। আর এ
কারনে যে তারা সুদ গ্রহন করত। অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারনে যে,
তারা অপরের সম্পদ ভোগ করত অন্যায় ভাবে। বস্তুত: আমি কাফিরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব…[সূরা আন-নিসা: ১৬০-১৬১]
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
কুরআনে আরও আছে: হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর।
যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার…(সুরা আলে ইমরান-১৩০)
সুদ একটি মারাত্মক পাপ, যার দ্বারা ক্ষতি সাধন হয় মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের, সামাজিক জীবনের এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের।
এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ আছে: মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায়
যা কিছু তোমরা সুদে দিয়ে থাক; মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট তা বর্ধিত হয় না ।
পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে…(সূরা- রুম, আয়াত-৩৯)
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে (কিয়ামতের দিন), যাকে (জ্বীন) শয়তান স্পর্শ করেই পাগল করে দেয় ।
এটা এই জন্যেই যে তারা বলে বেচা-কেনা তো সুদেরই মত…(সূরা-বাকারা, আয়াত-২৭৫) অতঃপর তোমরা যদি
তা (বকেয়া সুদ) না ছাড়, তবে জেনে রাখ এটা আল্লাহ তায়া’লা ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ ।
কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই । এতে তোমরা অত্যাচার করবেনা, অত্যাচারিতও হবে না…(সূরা-বাকারা, আয়াত-২৭৯)
সুদ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ আছে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন, সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর
ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান… [মুসলিম/জাবির (রাঃ), আবূ দাউদ, তিরমীযী]
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সুদ হল সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি । তার মাঝে সবচেয়ে
নিম্নতম হল-আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা…[ইবনে মাজাহ/ আবূ হুরাইরা (রাঃ)] নিশ্চয়ই যে অন্যায়ভাবে
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম…[বুখারী, মিশকাত]
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবেনা…[মিশকাত] হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন: শবে মেরাজ রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ করানোর সময় আমি আমার মাথার
উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম,
যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ।
যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল (আ:) ! এরা কারা?
তিনি উত্তরে বললেনঃ এরা সুদখোরের দল…[ইবনে মাযা ও আহমদ]
সুদ সম্পর্কে হাদিসে
হযরত আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপক
আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ পাক সেই জাতিকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন…[আবু ইয়া’লা ও হাকেম] সুদ
থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬ বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ…[ইবনে মাজা, বায়হাকী]
সুদ খাওয়ার শাস্তি
হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রা:) থেকে বর্ণিত। নবীয়ে আকরাম (সা:) বলেছেন: আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি
যে, দু’জন লোক আমার কাছে আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চলছে। যেতে যেতে আমরা
রক্তে পরিপূর্ণ এক নহরের পাড়ে দাঁড়ালাম। এ সময় আমরা দু’জন লোককে দেখতে পেলাম, একজন এ
নহরের মাঝে দাঁড়ানো, আরেকজন নহরের পাড়ে দাঁড়ানো। কিনারে দাঁড়ানো লোকটির সম্মুখে
অনেকগুলো পাথর। নহরের ভিতরে দাঁড়ানোর লোকটি কিনারার দিকে আসতে ইচ্ছা করলে, পাড়ের লোকটি
তার মুখে স্বজোরে পাথর নিক্ষেপ করে যে, লোকটি পুনরায় পূর্বেকার জায়গায় পৌঁছে যায়। সে যতবারই
পাড়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। রাসূলে আকরাম (সা:) জিজ্ঞাসা করলেন: এ
লোকটি কে? যার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। উত্তরে বলা হল: এ হচ্ছে সুদখোর ব্যক্তি…[বুখারী]
সুদের ভয়াবহ পরিনতি
রাসূলুল্লাহ্ সাঃ তার স্বপ্ন সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীসের একাংশে বলেন: সুদখোর মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আযাব দেয়া হবে।
আর তার আযাব হবে, তাকে এমন নদীতে সাঁতার কাটতে হবে, যার পানি হবে রক্তের মত লাল।
সুদের ভিত্তিতে দুনিয়ায় বসে সে সম্পদ সঞ্চয় করেছে আর হারাম সম্পদ সঞ্চয় করার জন্য তাকেও ভয়াবহ পরিনতি ভোগ করতে হবে
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
সুদের টাকা কি করতে হবে
যারা ব্যায়কে চাকরি করেন অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই পৌঁছে যাচ্ছে বাৎসরিক সুদ/মুনাফা। যারা
সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে, তারা যথাসম্ভব সুদি কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কারণ পবিত্র
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও।
অতঃপর যদি তোমরা না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত ২৭৮-২৭৯)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের
ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৫)
সুদ সম্পর্কে কোরআন হাদিসের এমন নিষেধাজ্ঞার দরুন মুমিনরা সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে।
কিন্তু কখনো কখনো নিরুপায় হয়ে সুদভিত্তিক ব্যাংকের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়। যেমন—সেলারি অ্যাকাউন্টের কথাই বলা যাক।
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
সরকারি ও বেসরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরাসরি হাতে হাতে দেওয়া হয় না।
বরং ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সে জন্য কোনো ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামে পৃথক পৃথক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে তার বেতন-ভাতা জমা দিয়ে দেয়। এরপর
কর্মচারীরা ব্যাংকে গেলেই সবাই নিজ নিজ বেতন ওঠাতে পারে। এই অ্যাকাউন্ট যেহেতু সেভিংস অ্যাকাউন্ট হয়,
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
ফলে ইচ্ছা না থাকলেও তাদের অ্যাকাউন্টে সুদের অর্থ চলে আসে।
উল্লেখ্য, এখানে চাকরিজীবীর কিছুই করার থাকে না। কোনো চাকরিজীবী এতে আপত্তি করলেও তার জন্য
প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে দেবে না। তারা সবার জন্য কোনো সুদি ব্যাংকে
গ্রুপ অ্যাকাউন্ট করে রাখে। এখানে যেহেতু চাকরিজীবী বাধ্য। অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে তার কোনো এখতিয়ার নেই।
তাই ওই সেভিং অ্যাকাউন্ট তথা সেলারি অ্যাকাউন্ট খোলার গুনাহ চাকরিজীবীর ওপর আরোপ হবে না। এর সব দায় ও গুনাহ প্রতিষ্ঠানের হবে।
ধর্মপরায়ণ অনেক মুসলমানই বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের করণীয় কী, তা অনেকেই জানেন না।
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
এখানে কর্মচারীদের করণীয় হলো, প্রতি মাসে সেলারি অ্যাকাউন্টে বেতনের অর্থ আসা মাত্র তা তুলে শরিয়া
মোতাবেক পরিচালিত কোনো ব্যাংকে রেখে দেবে। যদি নিজের কাজে ক্যাশ রাখার কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা
থাকে সেটা আরো ভালো। কিন্তু এর পরও যদি বছর শেষে তার অ্যাকাউন্টে কোনো সুদ চলে আসে,
তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই টাকা সুদদাতাকে ফেরত দিতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১২৪)
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
কিন্তু ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেহেতু নির্দিষ্ট সুদদাতা বের করা অসম্ভব, তাই সওয়াবের নিয়ত না করে কোনো জাকাত
খাওয়ার উপযুক্ত মিসকিনকে তা দান করে দিতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/১৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১২৬)
কোনো অবস্থাতেই সেই টাকা মসজিদ, মাদরাসা বা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ (যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ,
পাবলিক টয়লেট নির্মাণ) ইত্যাদিতে খরচ করা যাবে না। (ইমদাদুল মুফতিন, পৃ. ৫৮৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১৩১)
সুদ বা হারাম মালকে কি করতে হবে?
من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء
যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে সে ঐমালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেবে।যদি
ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না হয়,তাহলে গরীবদেরকে সদকাহ করে দেবে।(মা’রিফুস-সুনান১/৩৪)
সুদ-ও-মুনাফার-পার্থক্য
ঋণ দিয়ে যার কাছ থেকে সুদ উসূল করা হয়েছে,তাকেই ফিরিয়ে দিতে হবে।কিন্তু যেহেতু ব্যাংক ফেরত নেবে না
বা ফেরত নিলেও ব্যাংক সেই টাকাকে আবার সুদে লাগিয়ে দেবে,এজন্য ফুকাহায়ে কেরাম উক্ত টাকাকে
ফকির-মিসকিন দের মধ্যে সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত বন্টন করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ধনীর ছেলে যদি ঋণগ্রস্ত হয়,তাহলে নিশ্চয় সেই ঋণ
পরিশোধ করারও একটি পথ তার কাছে রয়েছে।সে কফির কিংবা মিসকিন নয়।তাই সে সুদ গ্রহণ করতে পারবে না।
হারাম মাল দ্বারা মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা যাবে না।
সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত এই মালকে শুধুমাত্র গরীব-মিসকিনদের মধ্যেই বিলিয়ে দিতে হবে।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
সম্মানিত ভিজিটর আপনাদের জন্য সকল তাফসীর গ্রন্থের লিংক দেওয়া হলো নিচে
সকল তাফসীর খন্ড পিডিএফ ফরমেটে পড়ুন
তাফসিরে জালালাইন সকল খন্ড পড়ুন
তাফসির ইবনে কাসির সব খন্ড পড়ুন
সুরা মুলক এর শানে নুযূল ফজিলত তাফসির সহ সমস্ত তথ্য
নফল নামাজ পড়ার সময় নিয়ম ও সুরা সহ সমস্ত তথ্য
ভালবাসার মানুষকে বশে রাখার পরীক্ষিত পদ্ধতি ও আমল