যেদিন এই নশ্বর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে সেই দিনটিকে বলা হয় কেয়ামত। কেয়ামতের দিন আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর কিছু পূর্ববর্তী ঘটনা বর্ণনা করেছেন। দাজ্জালের আগমন তার মধ্যে অন্যতম। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদিস। দাজ্জালের আগমন আলামত প্রকাশ সম্পর্কে ( আরও পড়ুন)
ফাতিমা বিনতে কায়স (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছি যে, ‘ছালাতের জন্য মসজিদে যাও’। তাই আমি মসজিদে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম।
দাজ্জালের আগমন
ছালাত শেষে তিনি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং মৃদু হাসি দিয়ে বললেন, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ ছালাতের জায়গায় বসুক। অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো কেন আমি তোমাকে একত্র করেছি? ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) ভালো জানেন।
তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে কিছু দিতে বা ভয় দেখানোর জন্য সংগ্রহ করিনি। বরং তামিম দারির একটা ঘটনা শোনার জন্য তোমাকে জড়ো করেছি। তামিম দারি একজন খ্রিস্টান মানুষ ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন।
তিনি আমাকে একটি ঘটনা বললেন যা দাজ্জাল সম্পর্কে আমি যা বলেছি তার সাথে মিলে যায়। তিনি বলেন, তিনি একবার লাখাম ও জুজম উপজাতির ত্রিশজন লোকের সাথে সমুদ্রযাত্রায় গিয়েছিলেন। সাগরের ঢেউ তাদের এদিক-ওদিক করে রাখে দীর্ঘ এক মাস।(দাজ্জালের আগমন আলামত প্রকাশ) Video
অবশেষে একদিন সূর্যাস্তের সময় আমরা একটা দ্বীপে পৌঁছলাম। তারপর তারা দ্বীপে প্রবেশ করল ছোট নৌকায় করে বড় নৌকার খোলের সাথে বাঁধা, এবং সেখানে তারা একটি প্রাণীর সাথে দেখা করল যার পুরো শরীর বড় লোমে ঢাকা ছিল।
অতিরিক্ত পশমের কারণে তার মুখ ও পিঠ বোঝা যাচ্ছিল না। তখন তারা তাকে লক্ষ্য করে বলল, “হায় তোমার, তুমি কে?” তিনি বলেন, আমি একজন গুপ্তচর।(দাজ্জালের আগমন আলামত প্রকাশ)
তুমি বাড়ির লোকটির কাছে যাও, সে তোমার খবরের অপেক্ষায় আছে। তামিম দারি বলেন, আমরা যখন প্রাণীটির কাছ থেকে মানুষটির কথা শুনি, তখন আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে সে শয়তান হতে পারে।
তারপর আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে দেখলাম বিশাল দেহের একজন মানুষ যা আগে কখনো দেখিনি। তাকে খুব শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তার হাত গলায় লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল এবং উভয় হাঁটু হাঁটুর নিচে।
দাজ্জালের আগমন আলামত প্রকাশ
আমরা তাকে বললাম, তোমার ভাগ্য খারাপ! আপনি কে তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আপনি আমাকে চিনবেন, এবং আমি এটি গোপন করব না।” তবে আগে বলো তুমি কে? তারা বলল, আমরা আরব।
আমরা সমুদ্রে একটি নৌকায় ছিলাম। দীর্ঘ এক মাস ধরে সমুদ্রের ঢেউ আমাদের এখানে-ওখানে নিয়ে এসেছে। তারপর আমরা দ্বীপে প্রবেশ করলাম। তারপর আমরা মোটা পশমে আবৃত একটি প্রাণীর দেখা পেলাম। তিনি বললেন, আমি গোপন সংবাদের সন্ধানকারী।
তিনি আমাদের এই বাড়িতে আসতে বললে আমরা দ্রুত আপনার কাছে চলে এসেছি। তিনি বললেন, আচ্ছা বলুন তো, বাইসান এলাকার তাল গাছে ফল দেখতে পান? (বায়সান হেজাজের একটি স্থানের নাম)। দাজ্জালের আগমন আলামত প্রকাশ
আমরা হ্যাঁ বললাম। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে তার আর ফল হবে না। তারপর বললেন, আচ্ছা দেখি, তাবরিয়া নামক বিলে পানি আছে কি? আমরা বললাম হ্যাঁ, এতে প্রচুর পানি আছে। তিনি বলেন, শীঘ্রই তার পানি শেষ হয়ে যাবে। তারপর বলল, আচ্ছা দেখা যাক,
তাবরিয়া নামক বিলে কি পানি আছে? আমরা বললাম হ্যাঁ, এতে প্রচুর পানি আছে। তিনি বলেন, শীঘ্রই তার পানি শেষ হয়ে যাবে। তারপর বললেন, আচ্ছা বলুন, যোগ নামক ঝর্ণায় জল থাকে আর সেই ঝর্ণার জল দিয়ে মানুষ কি জমি চাষ করে?
আমরা বললাম হ্যাঁ, এতে প্রচুর পানি আছে এবং সেখানকার লোকজন পানি দিয়ে জমি চাষ করে। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা দেখা যাক, নিরক্ষর নবীর খবর কি? আমরা বলি যে, তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
দাজ্জালের আগমন
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে বলুন, আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছিল? আমরা হ্যাঁ বললাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি তাদের সাথে কেমন আচরণ করেছেন? আমরা বলি যে তিনি তার চারপাশের আরবদের উপর জয়লাভ করেছেন এবং তারা তার আনুগত্য স্বীকার করেছে।
এ কথা শুনে তিনি বললেন, জানো! তার আনুগত্য করা তাদের জন্য ভালো। আচ্ছা এবার আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি- আমি দাজ্জাল। অদূর ভবিষ্যতে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মক্কা-মদিনা ছাড়া দেশের বাইরে ঘুরে বেড়াব। আমি চল্লিশ দিনের মধ্যে সারা বিশ্ব ভ্রমণ করব।
আমাকে এই দুই জায়গায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। যখনই আমি তাদের একটিতে প্রবেশ করতে চাই, ফেরেশতা আমাকে খোলা তলোয়ার নিয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেবেন। প্রকৃতপক্ষে, ফেরেশতারা প্রতিটি প্রবেশপথ পাহারা দিচ্ছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লাঠি দিয়ে মিম্বরে আঘাত করেছেন এবং তিনবার বলেছেন, ‘এটি মদীনা, এটি মদীনা, এটি মদীনা।’ অতঃপর তিনি বললেন, আমাকে বলুন, আমি কি আপনার কাছে এ হাদীস বর্ণনা করিনি? লোকেরা বললো হ্যাঁ।
দাজ্জালের আগমন
তারপর বললেন দাজ্জাল সিরিয়ার কোন সাগরে বা ইয়েমেনের কোন সাগরে আছে। তিনি বরং পূর্ব দিকে আসবেন। এতে তিনি হাত দিয়ে পূর্ব দিকে ইশারা করলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৪৬)।
উপরের হাদিসের মতো নিচের হাদিসেও পৃথিবীতে দাজ্জালের অবস্থান, পৃথিবীতে ঈসা (আ.)-এর আগমন ও অবস্থানসহ পুনরুত্থানের কিছু আলামত বর্ণনা করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, দাজ্জাল বের হয়ে চল্লিশ পর্যন্ত থাকবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি জানি না যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চল্লিশ দিন বলেছেন, চল্লিশ মাস বলেননি, চল্লিশ বছর বলেননি। অতঃপর আল্লাহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে পাঠাবেন। তাকে দেখতে উরওয়া ইবনে মাসঈদের মতো। সে দাজ্জালকে খুঁজবে এবং সে তাকে হত্যা করবে।
ঈসা (আঃ) এই পৃথিবীতে ৭ বছর অবস্থান করবেন
তখন মানুষের মধ্যে এমন শান্তি থাকবে যে, উভয়ের মধ্যে শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ সিরিয়ার দিকে শীতল বাতাস পাঠাবেন।
সেই বাতাস পৃথিবীর উপরিভাগে এমন একজন মানুষকেও বাঁচিয়ে রাখবে না যার অন্তরে পুণ্য বা ঈমানের কণা আছে। অর্থাৎ তোমাদের কেউ যদি পাহাড়ে লুকিয়ে থাকে, তবুও বাতাস সেখানে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাহলে শুধু দুষ্ট পাপী ও দুষ্ট লোকেরাই থাকবে।
তারা ব্যভিচারে পাখির মতো দ্রুতগামী হবে এবং জবাইয়ে পশুদের মতো পাথর হবে৷ ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না। তখন শয়তান তাদের কাছে মূর্তি আকারে এসে বলবে, তোমরা কি লজ্জা পাও না? তখন লোকে বলবে, আচ্ছা
আপনিই বলুন, আমাদের কী করা উচিত? তখন শয়তান তাদেরকে মূর্তি পূজা করতে আদেশ করবে। এ অবস্থায় তারা চরম সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগবিলাসে বসবাস করতে থাকবে।
তারা ব্যভিচারে পাখির মতো দ্রুতগামী হবে এবং জবাইয়ে পশুদের মতো পাথর হবে৷ ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না। তখন শয়তান তাদের কাছে মূর্তি আকারে এসে বলবে, তোমরা কি লজ্জা পাও না? তখন লোকে বলবে, আচ্ছা
আপনিই বলুন, আমাদের কী করা উচিত? তখন শয়তান তাদেরকে মূর্তি পূজা করতে আদেশ করবে। এ অবস্থায় তারা চরম সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগবিলাসে বসবাস করতে থাকবে। অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং যে তা শুনবে সে ভয়ে এদিক-ওদিক মাথা ঘুরবে।
নবী করীম (ছাঃ) বলেন, সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি সেই আওয়াজ শুনবে সে তার উটের জন্য পানির ট্যাংক মেরামত করছে। তখন সে সেখানে মরতে ভয় পাবে এবং অন্যান্য লোকেরাও ভয় পাবে। তখন আল্লাহ কুয়াশার মতো হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এটি সেই মৃতদেহগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করবে যা কবরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
তারপর দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে
তখন সব মানুষ উঠে যাবে। তখন ঘোষণা করা হবে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে ত্বরা কর। ফেরেশতাদেরকে আদেশ করা হবে তাদেরকে এখানে থামাতে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন ফেরেশতাদের বলা হবে, যারা জাহান্নামের উপযুক্ত তাদেরকে বের করে আন।
তখন ফেরেশতারা বলবে
আমি কতজনকে বের করব? বলা হবে, প্রতি হাজারে নিরানব্বই জনকে জাহান্নামে নিয়ে আস। এ পর্যন্ত এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এটাই সেই দিন যার কথা কুরআনে বলা হয়েছে, অন্য কথায়, ওই দিনের আতঙ্কে শিশুটি বৃদ্ধ হবে। সে দিন হবে খুবই সংকটময়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৮)।
পুনরুত্থান ঘটবে এই সত্যে কেবল একজন বিশ্বাসীই বিশ্বাস করে।
আর এর জন্য যথাসম্ভব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন এবং এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে আমলে সালাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন- আমীন!