আত্মহত্যা ও আত্মহত্যাকারীর ব্যাপারে জরুরি কিছু কথা এবং ভুল ধারণার সংশোধন ইসলামে আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া ও ক্ষমার বিষয়ে
আত্মহত্যাকারীর পরিণতি
হযরত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে থাকবে এবং চিরকাল সে জাহান্নামের ভিতর সেভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে।
যে বিষপানে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার হাতে বিষ থাকবে
চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।’’ [সহীহ বুখারী: ৫৭৭৮]
আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে কি?
আত্মহত্যাকারী যদি মুসলিম হয়, তাহলে শুধু আত্মহত্যার কারণে সে ইসলাম থেকে খারিজ হবে না। তাই, তার মৃত্যুর পর তার জানাযা দেওয়া হবে। তবে, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা (বিশেষ করে নেককার ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা) তার জানাযা পড়বে না।
জাবির ইবনু সামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক ব্যক্তির লাশ উপস্থিত করা হয়, যে চেপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাযার নামাজ আদায় করেননি (অন্যরা আদায় করেছেন)। [সহীহ বুখারী: ২১৫২]
ইসলামে আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া
এখানে মূল ব্যাপার হলো, সামাজিকভাবে আত্মহত্যার বিষয়টিকে ঘৃণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা। হাদিসটির একজন বর্ণনাকারী বলেন, নবিজি থেকে এই আচরণটি ছিলো আদবস্বরূপ। অর্থাৎ, একধরনের শিক্ষা প্রদান। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৫২৬]
জানাযা মানে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ। আর, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা যাবে। বরং এ ধরনের অপরাধীদের জন্যই মাগফিরাতের দু‘আ বেশি দরকার। কারণ আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে এদের জন্য।
আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে?
যদি আত্মহত্যাকারী নিজের জীবনের উপর বিরক্ত হয়ে আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট হয়ে ঈমানহারা হয়ে মারা যায়, তাহলে সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। কখনই সেখান থেকে বের হতে পারবে না।
কিন্তু যদি আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মারা যায়, তাহলে সে জাহান্নামে দীর্ঘদিন শাস্তিভোগের পর জান্নাতে যাবে। কারণ যত বড় অপরাধই করুক, কোনো ঈমানদার ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।
হযরত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাঁর রহমতেই তিনি যাকে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আর জাহান্নামিদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তারপর (ফেরেশতাদেরকে) বলবেন, ‘‘যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান দেখবে, তাকেও (জাহান্নাম থেকে) বের করে আনো।’’
তখন তারা এমন কিছু লোককে সেখান থেকে বের করে আনবে, যারা আগুনে জ্বলে কালো হয়ে গেছে এবং ‘হায়াত’ বা ‘হায়া’ নামক নহরে (ঝর্ণায়) নিক্ষেপ করবে।
তখন তারা এতে এমন সতেজ হয়ে ওঠবে, যেভাবে শস্যদানা স্রোতবাহিত পলিতে সতেজ হয়ে ওঠে। তোমরা কি দেখনি, কত সুন্দররূপে সে শস্যদানা কীভাবে হলদে মাথা মোড়ানো অবস্থায় অঙ্কুরিত হয়?’’ [সহীহ মুসলিম: ৩৪৫]
অন্য হাদিসে এসেছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জাহান্নাম থেকে এমন ব্যক্তিকেও বের করে আনা হবে, যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার অন্তরে অণু পরিমাণ কল্যাণ (ঈমান) আছে।’’ [সহীহ মুসলিম: ৩৬৬]
তবে, এটা ভেবে খুশিতে গদগদ হওয়ার কিছু নেই যে
একসময় জান্নাতে যাবে। কারণ জাহান্নামে কত কাল যে শাস্তি ভোগ করতে হবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আগুনে পুড়তে পুড়তে অঙ্গার হয়ে যাবে। হাদিসে ‘চিরকাল’ বলতে বুঝানো হয়েছে অনেক অনেক বছর। এটা নির্দিষ্ট না, তবে এটা অল্প দিনও না।
আত্মহত্যার ব্যাপারে কেউ আগ্রহী হলে, কখনই তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। বরং ভালো করে বুঝিয়ে এই চিন্তা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করবেন। তাও বাড়াবাড়ি করলে অবশ্যই সিনিয়রদেরকে এটি জানাবেন।
এমনকি আত্মহত্যা করার পর কখনই আত্মহত্যাকারীর এই ভয়াবহ কাজটিকে তার বিপদ-আপদ বা সমস্যা দিয়ে জাজ করবেন না, কৈফিয়ত (excuse) তালাশ করবেন না এবং এ ব্যাপারে সফট টোনে কথা বলবেন না।
কারণ আমাদের এসব আবেগী কথাবার্তা অনেকের এই জঘন্য কাজের চিন্তায় ফুয়েল যোগাতে পারে।
এ জঘন্য অপরাধ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন আমিন