সম্মানিত ভিজিটর মুসাফির কাকে বলে? মুসাফিরের নামাজ-সকল মাসআলা ও নিয়ম সমূহ আলোচনা করা হলো
মুসাফির কাকে বলে?
সহজভাবে বলতে হলে এভাবে বলা যায় যে ব্যক্তি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করে
তাকেই মুসাফির বলা হয় মুসাফির অবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম কে মুসাফিরের নামায বলে ।
মুসাফির হওয়ার শর্ত?
কত কিলোমিটার দূরে গেলে মুসাফির
যদি কোন ব্যক্তি মোটামুটি ৪৮ মাইল (৭৭.২৩২ কিলোমিটার) রাস্তা অতিক্রম করে কোন স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকার লোকালয় থেকে বের হয়
তাকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির বলা হয় তখন তাকে ইসলামী বিধান মোতাবেক মুসাফিরের নামায আদায় করতে হয়
মুসাফিরের নামায
এটা মুসলিম পর্যটকদের একটি বৈশিষ্ট্য লম্বা ভ্রমণে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাত পড়া মুসাফির ব্যক্তি
প্রথম মধ্যে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ অর্থাৎ যোহর আছর ও এশার ফরজ নামাজ কে দুই রাকাত পড়বে একে কসরের নামাজ বলে।
তিন রাকাত দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ ওয়াজিব নামাজ এমনইভাবে সুন্নত নামাজ পড়তে হবে এই হল
পথিমধ্যে থাকাকালীন সময়ে বিধান আর গন্তব্য পৌঁছার পর যদি
মুসাফির কাকে বলে?
সেখানে 15 দিন বা তার থেকে বেশি থাকার নিয়ত হয় তাহলে কষ্ট হবেনা নামাজ পরিপূর্ণভাবে পড়তে হবে আর
মুসাফির কাকে বলে?
যদি 15 দিনের কম থাকার নিয়ম থাকে তাহলে কসরের নামাজ তথা মুসাফিরের নামায আদায় করতে হবে
গন্তব্যস্থান নিজের বাড়ি হলে কসর হবে না চাই যে কয়দিন ই থাকার নিয়ত করুক মুসাফিরের জন্য নামাজ সংক্ষিপ্ত করা
আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য উপহার স্বরূপ তাই মুসাফিরের জন্য ওয়াজিব হল সেই উপহার গ্রহণ করা
শেষ হলো মুসাফির কাকে বলে? এর আলোচনা
মুসাফির যদি ইমাম হয়
স্থানীয় কোন ব্যক্তি অথবা মুকিম ব্যক্তি যদি মুসাফির ইমামের পিছনে এক্তেদা করে তাহলে মুসাফির
ইমাম চার রাকাতের জায়গায় দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিবে মুকিম ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সূরা মিলানো ছাড়া বাকি দুই রাকাত আদায় করে নেবে
মুসাফির ও মুকিম এর মাসআলা
মুসাফির ব্যক্তি যদি সফর অবস্থায় তার নামাজ ছুটে যায় তাহলে সে যখন মুকিম হবে তখন সে নামাজ আদায় করলে কসর আদায় করবে ।
মুকিম ব্যক্তির ছুটে যাওয়া নামাজ মুসাফির অবস্থায় আদায় করলে পরিপূর্ণ আদায় করে নিতে হবে
মুসাফির ব্যক্তির সুন্নত নামাজ পড়ার বিধান
উল্লেখ থাকে যে মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ব্যস্ততা থাকলে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ব্যতীত অন্য সুন্নত না
পড়ার সুযোগ আছে তবে ব্যস্ততা না থাকলে প্রত্যেক নামাযের সুন্নত করে নেয়াই উত্তম
মুসাফিরের মাসআলা
মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত ছেড়ে দেওয়া জায়েজ আছে ব্যস্ত না থাকলে সব সুন্নত পড়া উত্তম
যারা লঞ্চ স্টিমার পেলেন বাস-ট্রাক ইত্যাদির চাল বা কর্মচারী তারাও অনুরূপ দূরত্বের সফর হলে পথিমধ্যে কসর করবে আর গন্তব্য স্থানে মাসাআলা উপযুক্ত নিয়ম অনুযায়ী হবে
15 দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হয়নি এবং পূর্বেই চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না এভাবে 15 দিন বা
তার বেশি থাকা হলেও মুসাফির বলে গণ্য হবে এবং কসরের নামাজ আদায় করতে হবে
কছর করা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
অর্থ তোমরা যখন জমিনে সফর করো এবং তোমাদের আশংকা হয় যে কাফিরগণ তোমাদের বিপন্ন করবে
তখন সালাত করলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন
অনেক হাদীসে এসেছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ ও ওমরা যুদ্ধসহ যেকোনো সফরে কছরের নামাজ পড়তেন
মুসাফির ফজিলত সম্পর্কে
হযরত ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সাথে ছিলাম তিনি সফরে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাতের বেশি পড়তেন না
হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একই রকম নামাজ পড়তেন বুখারী ও মুসলিম
বিমান গাড়ি স্টিমার ট্রেন পর্বতারোহণ ও পদব্রজ ভ্রমণ এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই সবগুলোই সফর ভ্রমণ এর আওতাভুক্ত সব সফরেই মুসাফির কসরের নামাজ আদায় করতে হবে
মুসাফির কছরের নামায কখন শুরু করতে হবে
সফরে রওনা হলে মুসাফির তার নিজের গন্তব্য স্থান ত্যাগ করার আগে কসরের নামাজ পড়তে পারবেনা গন্তব্য স্থান ত্যাগ করে তাকে কসরের নামাজ আদায় করতে হবে
মুসাফিরের জামাতের নামাজ
সফররত মুসাফিরের জন্য ইমাম হয়ে নামাজ পড়া জায়েজ আছে এক্ষেত্রে সে দু’রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফিরাবে
এবং মুকিম একাকী নামাজ শেষ করে নিবে মুসাফিরের জন্য মুস্তাহাব হল সালাম ফিরিয়ে মুক্তাদির বলা আপনারা নামাজ পড়ুন আমি মুসাফির।
উল্লেখযোগ্য যে মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে কসর করবে না কোন নামাজ পড়তে হবে ইমাম মুসলিম ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেন মুসাফির ইমামের সাথে চার রাকাত পড়বে আর একা পড়লে দুই রাকাত পড়বে
কসর নামাজের ফজিলত
কসর নামাজের ফজিলত অপরিসীম মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য করেই সহজ বিধান দিয়েছেন
ইসলাম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য মুক্তির জন্য আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন যে কারণে ইসলাম নামাজের মত এত বড় এবাদত তেও ছাড় দিয়েছেন
ইমামে আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন চার রাকাত নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে কেননা আল্লাহ তায়ালা এই দুই রাকাতের বিনিময়ের চার রাকাতের সাওয়াব দান করেন সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি
মুসাফির ফজিলত সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলা বলেন
يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তাআলা তোমাদের সকল কাজকে সহজ করতে চান কঠিন করতে চান না আল বাকারা আয়াত 185 ।
ইসলাম নিশ্চয়ই একটি সহজ ধর্ম আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপরে চাপিয়ে দেন না
তা করতে সে অক্ষম তাই সফরের কষ্টের আশঙ্কা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে দিয়েছেন
মুসাফির কখন মুকিম হবে?
যে সীমানা থেকে মুসাফির বলে গণ্য হয়েছিল, সেই সীমানায় প্রবেশের পর থেকেই সে মুকিম হয়ে যাবে।
যে সীমানা থেকে মুসাফির বলে গণ্য হয়েছিল সেই সীমানায় প্রবেশ পর থেকেই মুকিম হয়ে যাবে ।
কারো একাধিক আবাসস্থল থাকলে যেকোনো একটি এলাকায় প্রবেশ করলে সে মুকিম হয়ে যাবে
এছাড়া নিজ বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও যদি 15 দিন বা তার বেশি থাকে অথবা নিয়োগ করে তাহলে সে মুকিম হয়ে যাবে ।
মুসাফিরের নামাজ কসর না করলে গুনাহ হবে কি?
ইসলাম যখন যা বিধান দিয়েছে তাই পালন করা আবশ্যক ৷
এক্ষেত্রে নিজে থেকে কম বেশি করার সুযোগ নাই ৷ ইসলাম ওজুর বিকল্প তায়াম্মুম দিয়েছে ৷
প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই ৷ বান্দার কল্যাণই চায় ইসলাম ৷ তাই সফরের কসর নামাজ কসরই পড়তে হবে ৷
অন্যথায় নামাজই হবে না ৷ দু রাকাতের জায়গায় বেশি সূফিগিরি দেখিয়ে চার রাকাত পড়া যাবে না ৷
মনে খুঁত খুঁতিও রাখা যাবে না ৷
মেয়েদের মুসাফির হওয়ার শর্ত?
মেয়েরা বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে মুকিম থাকবে
তবে বিবাহের পর যদি মেয়েরা মৌলিকভাবে স্বামীর বাড়িতে থাকে এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে
তাহলে স্বামীর বাড়ি তার মৌলিক বাসস্থান হিসেবে গণ্য হবে এবং পিতার বাড়ি সে মুসাফির অবস্থায় থাকবে সাথে সাথে মুসাফিরের কার্যক্রম তাকে সম্পাদন করতে হবে ।
স্বামী যদি শশুর বাড়ি 15 দিন নিয়ত করে থাকে তাহলে সে মুসাফির ওই থাকবে যদি 15 দিনের বেশি থাকে তাহলে ভিন্ন কথা সূত্র রদ্দুল মুহতার ।
মুসাফির স্থানীয় ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার বিধান
মুসাফির ব্যক্তি স্থানীয় ইমামের পিছনে নামাজের নিয়ত করলে অথবা এক্তেদা করলে ইমাম কে অনুসরণ করে পূর্ণ নামাজেই পড়তে হবে
এ বিষয়ে হাদিসে এরশাদ হয়েছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন
মুসাফির যদি ইমামের পিছনে ইক্তিদা করে তাহলে তাকে চার রাকাতের জায়গায় চার রাকাতই পড়তে হবে ।
*সম্মানিত ভিজিটর পোষ্টের কোন শব্দ বা বাক্য যদি আপনাদের ভুল মনে হয় তাহলে আমাদেরকে মেইল করুন !
সম্মানিত ভিজিটর আপনাদের জন্য সকল তাফসীর গ্রন্থের লিংক দেওয়া হলো নিচে
সকল তাফসীর খন্ড পিডিএফ ফরমেটে পড়ুন
তাফসিরে জালালাইন সকল খন্ড পড়ুন
তাফসির ইবনে কাসির সব খন্ড পড়ুন
সুরা মুলক এর শানে নুযূল ফজিলত তাফসির সহ সমস্ত তথ্য
নফল নামাজ পড়ার সময় নিয়ম ও সুরা সহ সমস্ত তথ্য
ভালবাসার মানুষকে বশে রাখার পরীক্ষিত পদ্ধতি ও আমল
*ইসলাম বিভাগে আপনার লেখা পাঠাতে মেইল করুন*
fumor209@gmail.com