আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ফজিলত অর্থ কি? বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত ভিজিটর আপনাকে স্বাগতম সূরাঃ আল-বাকারা আয়াত ২৫৫
সম্মানিত ভিজিটর আপনাদের জন্য সকল তাফসীর গ্রন্থের লিংক দেওয়া হলো নিচে
সকল তাফসীর খন্ড পিডিএফ ফরমেটে পড়ুন
তাফসিরে জালালাইন সকল খন্ড পড়ুন
তাফসির ইবনে কাসির সব খন্ড পড়ুন
সুরা মুলক এর শানে নুযূল ফজিলত তাফসির সহ সমস্ত তথ্য
নফল নামাজ পড়ার সময় নিয়ম ও সুরা সহ সমস্ত তথ্য
ভালবাসার মানুষকে বশে রাখার পরীক্ষিত পদ্ধতি ও আমল
আয়াতুল কুরসি আরবি
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আল হাইয়ুল কাইয়ূমু
লা-তা’খুযুহূ ছিনাতুওঁ ওয়ালা-নাওমুন
লাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি
মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূইল্লা-বিইযনিহী
ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম
ওয়ালা-ইউহিতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহীইল্লা-বিমা-শাআ
ওয়াছি‘আ কুরছিইয়ুহুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা
ওয়ালা-ইয়াঊদুহু হিফজু হুমা-ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ূল ‘আজীম।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক।
তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?
দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না,
কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।
আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন:
যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। [সহীহ আল্ জামে :৬৪৬৪]
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
হজরত আলী (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি-
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে।
যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। [সুনানে বাইহাকী]
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাজতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে। (বুখারি)
হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত: রাসুল (সা.) বলেছেন: সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে,
যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। [মুস্তাদরাকে হাকিম:২১০৩]
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
আবূ হুরাইরাহ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু) বলেছেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, সূরা আল বাক্বারায় এমন একটি আয়াত রয়েছে
যা কুরআনের অন্য সব আয়াতের সর্দার বা নেতা। সে আয়াতটি যে ঘরে পড়া হয়, তা থেকে শয়তান বেরিয়ে যায়। [তাফসীর মা’ আরেফুল কুরআন-১ম খণ্ড, পৃ: ৬৭৬]
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
মুসলিম সমাজে আয়াতুল কুরসি নিয়ে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে, তাহলো কোথাও যাওয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসি পড়ে বের হলে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আয়াতুল কুরসির শানে নুযুল
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাকত।
একরাতে সে পাহারা দেয়। হঠাৎ যুবকের মত এক জন্তু দেখা গেলে,তিনি তাকে সালাম দেন।সে সালামের উত্তর দেয় ।
তিনি বলেন: তুমি কি ? জিন না মানুষ? সে বলে: জিন। উবাই (রাঃ) তার হাত দেখতে চান।সে তার হাত দেয়।
তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন: এটা জিনের সুরত। সে (জন্তু) বলে:
জিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী। তিনি বলেন: তোমার আসার কারণ কি? সে বলে: আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন,তাই কিছু সাদকার
খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। সাহাবী বলেন: তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সে বলে: সূরা বাকারার এই
আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়্যূল কাইয়্যূম), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত
আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে।
সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর কাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। রাসূলুল্লাহ্ বলেন: খবীস সত্য বলেছে”
[সহীহুত্ তারগীব:১/৪১৮]
আয়াতুল কুরসির তাফসীর
এই পবিত্র আয়াতে দশটি বাক্য রয়েছে। দশটি বাক্য আলাদা আলাদা তাফসীর উপস্থাপন করা হচ্ছে।
১ম বাক্যঃ اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ
অনুবাদঃ আল্লাহ – তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
“আল্লাহ” নাম সম্পর্কিত ব্যাখ্যাঃ
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু’র বর্ণনা অনুযায়ী, আল্লাহ হলেন এমন সত্তা – সমগ্র সৃষ্টি যার ইবাদাত করে। অর্থাৎ, সারা বিশ্বের মাবুদ হলেন আল্লাহ। (তাফসীরে তাবারী, ১ম খণ্ড)
মুহাম্মাদ শাফী লিখেছেনঃ “আল্লাহ” শব্দটি সৃষ্টিকর্তার নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মহত্তর ও তার যাবতীয় গুণের সম্মিলিত রূপ।
কোন কোন আলিম একে ইসমে আযম বলেও অভিহিত করেছেন। এ নামটি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়,
এজন্যই এ শব্দটির দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। কেননা, আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই।
মোটকথা, আল্লাহ এমন এক সত্তার নাম, যে সত্তা পালনকর্তার সমস্ত গুণের এক অসাধারণ প্রকাশবাচক। তিনি অদ্বিতীয় ও নজিরবিহীন। (মাআরিফুল কুরআন, ১ম খণ্ড)
আয়াতুল কুরসীর তাফসীর
মুহাম্মাদ সানাউল্লাহ পানীপথী লিখেছেনঃ “আল্লাহ” শব্দটি সেই অপরিহার্য সত্তার নাম, যিনি পূর্ণতার সমষ্টি এবং হীনতা থেকে পবিত্র। (তাফসীরে মাযহারী, ১ম খণ্ড)
শামসুল হক ফরিদপুরী লিখেছেনঃ “আল্লাহ” শব্দটি এতই খাস যে, এর চেয়ে খাস শব্দ জগতে আর নেই। আল্লাহ নিজেই তার ব্যক্তিবাচক নাম রেখেছেন “আল্লাহ”।
তার অন্যান্য যতো নাম আছে, সেগুলো গুণবাচক নাম। …… কুরআন শরীফে ও হাদিস শরীফে আল্লাহ’র যে নাম নেই, সে নাম ধরে আল্লাহ’কে ডাকা ঠিক নয়।
….. “আল্লাহ” নামের বৈশিষ্ট্য এই যে, এ শব্দটি অন্য কোন ভাষায় অনুবাদ হতে পারে না। এ শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ নেই, বহুবচন নেই। আর ইংরেজিতে বলা হয় গড, কিন্তু তার স্ত্রীলিঙ্গও আছে, বহুবচনও আছে।
আয়াতুল কুরসির তাফসির
বাংলায় ঈশ্বর শব্দেরও স্ত্রীলিঙ্গ আছে। ফারসীতে খোদা শব্দের খাস আল্লাহ অর্থেও ব্যবহার আছে, আবার
অধিকারী, মালিক অর্থেও ব্যবহার আছে। অনুবাদ যখন হতে পারে না, তখন ব্যাখ্যার প্রয়োজন। ব্যাখ্যা এই –
নিরাকার নিরঞ্জন, অগতির গতি, অনাথের নাথ, নিরুপায়ের উপায়, নিরাশ্রয়ের আশ্রয়, সকলের সকল
অভাব মোচনকারী, সর্বশক্তিমান, দয়াময়, অনাদি-অনন্ত, চিরঞ্জীব, সর্বগুণাকর, সর্ব গুণের আধার, আত্মা-দেহ
আর ইহকাল-পরকালের সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা যিনি – তার মহামহিম পবিত্র নাম ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিবাচক নাম “আল্লাহ”। (হাক্কানী তাফসীর, ১ম খণ্ড)
মুহাম্মাদ আলী আস-সাবূনী লিখেছেনঃ “আল্লাহ” সবচেয়ে মহান পবিত্র সত্তার নাম। এ নামটি আল্লাহ ছাড়া
আর কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তার নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মহান ও অদ্বিতীয় নাম। সত্যের অস্তিত্বের এক
সত্তার নাম, প্রভুত্বের যাবতীয় গুণাবলীর সম্মিলিত রূপ। প্রতিপালনের যাবতীয় গুণাবলীতে গুণান্বিত, বাস্তব
অস্তিত্বের একমাত্র সত্তা, তিনিই সেই পবিত্র সত্তা যিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। (সাফওয়াতুত তাফাসীর, ১ম খণ্ড)
আয়াতুল কুরসির তাফসীর
ইবনে কাসির লিখেছেনঃ “আল্লাহ” শব্দটি মহাবিশ্বের একমাত্র মহান প্রতিপালক মহাপ্রভুর নাম। কেউ কেউ
বলেন, সেটিই ইসমে আজম। কারণ, “আল্লাহ” শব্দের মধ্যে সকল গুণের সমাবেশ ঘটেছে। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।
তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা-
বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; তারা যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র, মহান।
তিনিই আল্লাহ – সৃজনকর্তা, উদ্ভাবন কর্তা, রুপদাতা, সকল উত্তম নাম তারই। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা
কিছু আছে, সমস্তই তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাহ আল-হাশর, ৫৯ : ২২-২৪)
আয়াতুল কুরসির তাফসীর
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত অন্যান্য সকল গুণকে “আল্লাহ” এর সাথে সংশ্লিষ্ট করে দেখিয়েছেন। অনুরূপভাবে অন্যত্র বলেছেনঃ
“আর আল্লাহ’র সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, তোমরা সেসব নামে তাকে ডাকো ….” (সূরাহ আল-আরাফ, ৭ : ১৮০)
তিনি আরো বলেনঃ
“বলোঃ আল্লাহ বলে আহবান করো কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান করো না কেন, সব সুন্দর নাম তো তারই …..” (সূরাহ বানি ঈসরাঈল, ১৭ : ১১০)
“আল্লাহ” একটি অনন্য নাম। মহাবিশ্বে একক মহান প্রতিপালক প্রভু ভিন্ন অন্য কেউ উক্ত নামে অভিহিত নয়।
এ কারণেই আরবী ভাষায় সেটির সম-ধাতুজ কোন সমাপিকা ক্রিয়া পরিদৃষ্ট হয় না। …..” (তাফসীরে ইবন কাসির, ১ম খণ্ড)
মুহাম্মাদ ইদ্রিস কান্দলভী লিখেছেনঃ “আল্লাহ” সেই ওয়াজিবুল অজুদ বা অবশ্যম্ভাবী অস্তিমান সত্তার নাম,
যিনি উত্তম গুণাবলীর আধার এবং সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটির আভাস ও ধারণা থেকে পুত-পবিত্র। এ কারণেই
“আল্লাহ”
শব্দটি সর্বদা বিশেষিত পদ বা মাওসুফ (الموصوف) রূপে ব্যবহৃত হয় এবং আসমাউল হুসনা বা
আল্লাহ’র গুণবাচক নামগুলোকে
বিশেষণ পদ বা সিফাত রূপে “আল্লাহ” নামের পরে উল্লেখ করা হয়। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ
“তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।
তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা-বিধায়ক,
তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; তারা যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র, মহান।
তিনিই আল্লাহ – সৃজনকর্তা, উদ্ভাবন কর্তা, রুপদাতা, সকল উত্তম নাম তারই। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা
কিছু আছে, সমস্তই তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাহ আল-হাশর, ৫৯ : ২২-২৪)
আয়াতুল কুরসি তাফসীর
“আল্লাহ” নামটি মহাপ্রভু ও স্রস্টার জন্যই নির্দিষ্ট। এটি সর্বদা সেই একক, লা-শারীক, পুত-পবিত্র সত্তার জন্য
ব্যবহৃত হয়। যেভাবে তার সত্তা ও গুণে কোন শরীক নেই, তেমনিভাবে এ মহান নামেও তার কোন শরীক নেই। এ
কারণেই সকল আউলিয়ায়ে কেরামের অভিমত হলো, “আল্লাহ” নামই ইসমে আজম। ….” (মাআরিফুল কুরআন, ১ম খণ্ড)
মুহাম্মাদ আবদুর রহীম লিখেছেনঃ “আল্লাহ” শব্দটি মূলতঃ “ইলাহ” শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে। এটির প্রথমের
“আলিফ” (হামজা) উহ্য করে দিয়ে সেখানে “আলিফ” ও “লাম” বসানো হয়েছে এবং একই স্থানের দুই “লাম” পরস্পর মিলিত হয়েছে।
এভাবে “আল্লাহ” শব্দটি গঠিত হয়েছে।
আভিধানিক অর্থে “ইলাহ” বলা হয় এমন প্রত্যেক মাবুদকে, যার কোন না কোন প্রকারের ইবাদাত-বন্দেগী
ও আনুগত্য আরাধনা করা হয়। কিন্তু এর উপর “আলিফ” ও “লাম” অক্ষর দুটো বসার ফলে “আল্লাহ” শব্দটি গঠিত হয়েছে
বিধায় এর অর্থ সম্পূর্ণ নতুনভাবে গ্রহণ করেছে।
আল্লাহ হচ্ছেন একমাত্র সেই মহান সত্তা, যিনি নিজ ক্ষমতা ও প্রতিভার দ্বারা বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেন,
লালন-পালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করছেন, এটির যাবতীয় প্রয়োজন যথাযথভাবে পূরণ করে সেটিকে ক্রমশঃ
বিকাশ দান করছেন, সামনের দিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এই সব কারণে নির্দিষ্টভাবে একমাত্র
তিনিই সকল প্রকার পূজা-উপাসনা ও আনুগত্য-ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত ও নিরঙ্কুশভাবে এই সব কিছুরই অধিকারী।
“আল্লাহ” খোদা তাআলার নিজ মূল সত্তার নাম।
এ নাম তিনি ছাড়া আর কারো জন্য ব্যবহৃত হতে পারে না।
কুরআনে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে – “যিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া কেউই ইলাহ নয়, আর কোন ইলাহ নেই।”
বস্তুতঃ ইলাহ হওয়ার যে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ভাবধারা, তা-ই এই শব্দটির মৌলিক অর্থ। এটি ছাড়া আল্লাহ’র আরো
যতো নাম আছে, তা সবই এর অধীন, এবং তা সবই আল্লাহ’র গুণবাচক নাম। (সূরা ফাতিহার তাফসীর)
ফখরুদ্দীন আর-রাযী “আল্লাহ” নাম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনায় লিখেছেনঃ “আল্লাহ” শব্দটি নামবাচক
বিশেষ্য …… খলীল বলেন, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, “আল্লাহ” শব্দটি আল্লাহ তাআলার জন্যই নির্দিষ্ট।
এমনিভাবে “الاله” শব্দটিও। যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যও “الاله” এর ব্যবহার করতো, তারা এটিকে কোন
কিছুর সাথে সম্বন্ধযুক্ত করেই ব্যবহার করতো। অথবা, এটিকে নাকিরা বা অনির্দিষ্টতাবাচক হিসেবে “ال” ছাড়া
ব্যবহার করতো। যেমন, আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের উক্তি বর্ণনা করেন যে, তারা তাকে বলেছিলো –
اجْعَل لَّنَا إِلَـٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ ۚ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ
অর্থঃ “…. আপনি আমাদের জন্য একটি ইলাহ বানিয়ে দিন, যেমন তাদের ইলাহ আছে;
তিনি বললেনঃ তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়।” (সূরাহ আল-আরাফ, ৭ : ১৩৮)
এরপর আর-রাযী লিখেছেনঃ উল্লেখ্য, “الله” শব্দটির এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে,
আয়াতুল কুরসি
যা আল্লাহ তাআলার অন্য কোন নামের মধ্যে পাওয়া যায় না। আমরা নীচে সেদিকে ইশারা করছি।
একঃ আপনি যদি “الله” এর “আলিফ” লোপ করেন, তবে অবশিষ্ট থাকবে “لله”, আর তা-ও কেবল আল্লাহ তাআলার জন্যই প্রযোজ্য, যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ
وَلِلَّـهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
অর্থঃ “….. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সেনাদল তো আল্লাহ’র-ই …..” (সূরাহ আল-ফাতহ, ৪৮ : ৪)
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
وَلِلَّـهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
অর্থঃ “…. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধনভাণ্ডারসমূহ আল্লাহ’র-ই …..” (সূরাহ আল-মুনাফিকুন, ৬৩ : ৭)
“الله” থেকে প্রথম “ل” লোপ করলে বাকি থাকে “له” (তার জন্য)। এর দ্বারাও আল্লাহ তাআলাকেই বুঝায়। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ
لَّهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
অর্থঃ “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কুঞ্জিসমূহ তো তারই ….” (সূরাহ আয-যুমার, ৩৯ : ৬৩)
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ
অর্থঃ “….. সার্বভৌমত্ব তারই আর প্রশংসা তারই …..” (সূরাহ আত-তাগাবুন, ৬৪ : ১)
দ্বিতীয় “ل” লোপ করলে অবশিষ্ট থাকে “هو”, এটিও আল্লাহ তাআলাকে নির্দেশ করে, যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ
قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ
অর্থঃ “বলোঃ তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।” (সূরাহ আল-ইখলাস, ১১২ : ১)
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
هُوَ الْحَيُّ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ
অর্থঃ “তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই ….” (সূরাহ আল-মুমিন, ৪০ : ৬৫)
“هو” এর “و” হরফটি অতিরিক্ত। প্রমাণ এই যে, দ্বিবচন ও বহুবচনে এটি লোপ পেয়ে যায়।
বস্তুত দ্বিবচনে বলা হয় “هما” আর বহুবচনে বলা হয় “هم”। দেখা যাচ্ছে উভয় ক্ষেত্রেই “و” হরফটি অনুপস্থিত। আর “الله” শব্দটির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
আল্লাহ তাআলার অন্য কোন নামে এই বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় না।
আবার এ বৈশিষ্ট্য যেমন শাব্দিকভাবে পাওয়া যায়, তেমনি অর্থগতভাবেও পাওয়া যায়। কেননা, আপনি
যখন আল্লাহ তাআলাকে “আর-রহমান” বলে ডাকেন, তখন তাকে কেবল “রহমত” গুণেই বিশেষিত করে
থাকেন, কাহর বা প্রচণ্ডতা গুণে নয়। যখন “আল-আলিম” (العليم) নামে ডাকেন, তখন তাকে ইলম বা জ্ঞানের গুণে বিশেষিত করে থাকেন, কুদরত বা শক্তি গুণে নয়।
পক্ষান্তরে যখন “আল্লাহ” বলে ডাকেন, তখন তাকে তার সমস্ত গুণের সাথেই ডেকে থাকেন।
কেননা, ইলাহ যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট সমস্ত গুণে গুণমণ্ডিত হোন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ইলাহ হতে পারেন না।
কাজেই প্রমাণিত হয় যে, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যটি কেবল “আল্লাহ” শব্দের মধ্যেই বিদ্যমান আছে, অন্য কোন নামে নয়।
আয়াতুল কুরসির তাফসীর
দুইঃ কালেমায়ে শাহাদাত অর্থাৎ যে বাক্য দ্বারা কাফির তার কুফর থেকে ইসলামে চলে আসে, তাতে কেবল এই
নামটিই ব্যবহৃত হয়। কোন কাফির যদি “اشهد ان لا اله الا الرحمن” বলে, অথবা “الا الرحيم” বা “الا الملك” কিংবা “الا القدوس” বলে, তবে সে কুফর থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না।
পক্ষান্তরে সে যদি বলে “اشهد ان لا اله الا الله”, তবে এর দ্বারা সে কুফর থেকে বের হয়ে ইসলামে চলে আসে।
এটিও “আল্লাহ” শব্দটির এক মহান বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলাই সরল সঠিক পথের দিশারী। (তাফসীরে কাবীর, ১ম খণ্ড)
আমীন আহসান ইসলাহী লিখেছেনঃ “اله” শব্দের প্রথমে আলিফ-লাম যুক্ত করে “الله” শব্দ গঠিত হয়েছে। সৃষ্টির
শুরু থেকে এ নাম কেবলমাত্র আসমান যমীনসহ সর্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা মহান সত্তার জন্যই নির্দিষ্ট। তিনি ছাড়া
অন্য কোন বস্তু কিংবা ব্যক্তির নামকরণ এ শব্দ দ্বারা করা হয়নি। কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে জাহেলী
আরবদের মধ্যেও এ অর্থই প্রচলিত ছিলো। মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের উপাস্য দেব-দেবীর কাউকে
তারা আল্লাহ’র সমকক্ষরূপে বিশ্বাস কিংবা তার মর্যাদায় স্থান দিতো না। তারা স্বীকার করতো নভোমণ্ডল-
ভূমণ্ডলসহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের মালিক
ও খালিক একমাত্র আল্লাহ। চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করে এদেরকে তিনিই
সেবায় নিয়োজিত করেছেন। মেঘের কোল থেকে বৃষ্টি বর্ষণ এবং সৃষ্টিকুলের রুজি-রোজগার, পানাহারসহ
প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ তারই দায়িত্বে এবং তিনি এ সবের একক যিম্মাদার। অন্যান্য দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা
ও আরাধনা-উপাসনা ছিলো নিছক তাদের মিথ্যা আকিদার ফলশ্রুতি। তারা মনে করতো, এরা মহান
আল্লাহ’র নৈকট্যশীল। আল্লাহ’র দরবারে এরাই তাদের পক্ষে সুপারিশের আরযী দিবে। পবিত্র কুরআনে তাদের
এহেন মিথ্যা আকিদার বিবরণ বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। নীচে সংখিপ্তাকারে মাত্র ২/৩ টি আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হলো –
আমরা তো এদের উপাসনা শুধু এজন্যই করে থাকি যে, ওরা আমাদেরকে আল্লাহ’র ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে পৌঁছে দিবে (সূরাহ আয-যুমার. ৩৯ : ৩)
“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন – নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল কে সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে সেবায়
নিয়োজিত কে করেছে ? তখন তারা অবশ্যই বলবে – ‘আল্লাহ’। তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ? আল্লাহ
তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন আর যার জন্য ইচ্ছা কমিয়ে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল
বিষয়ে সম্যক অবগত। আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন – কে আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করে, এরপর সে
পানি দ্বারা মৃত হওয়ার পর যমীনকে সঞ্জিবীত করে ? তাহলে অবশ্যই তারা বলবে – ‘আল্লাহ’।” (সূরাহ আল-আনকাবুত, ২৯ : ৬১-৬৩)
Ayatul Kursi
একইভাবে সকল শক্তির যোগ্যতা, জীবন-মরণ, বিশ্ব পরিচালনা-ব্যবস্থাপনা, হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদির মূলকেন্দ্র
এবং আসল উৎসরূপে আল্লাহ’কে স্বীকার করে নিতেও তাদের কোন আপত্তি ছিল না। যেমন আল-কুরআনের ভাষায়ঃ
আপনি জিজ্ঞাসা করুন, তোমাদেরকে আসমান-যমীন থেকে কে রুযী দান করেন, অথবা কে তোমাদের কান ও
চোখের মালিক ? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে, অনুরূপ কে-ই বা মৃতকে জীবিতের ভিতর থেকে
বের করেন ? আর কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাই বা কার হাতে ? তখন তারা বলে উঠবে, ‘আল্লাহ’।
তাহলে আপনি বলুন – এরপরও কি তোমরা তাকে ভয় করো না ?” (সূরাহ ইউনুস, ১০ : ৩১) (তাদাব্বুরে কুরআন, ১ম খণ্ড)
আয়াতুল কুরসির তাফসীর
“ইলাহ” শব্দের ব্যাখ্যাঃ
“আল্লাহ” নাম সম্পর্কিত আলোচনায় “ইলাহ” সম্পর্কিত কিছু আলোচনা চলে এসেছে, এতে “ইলাহ” এর সহজ
ব্যাখ্যাও সাথে সাথে চলে এসেছে। একটু পর পূর্ণ প্রথম অংশের ব্যাখ্যায় আরো পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে। আর পূর্বে “ইলাহ” সম্পর্কিত ছোট্ট একটি আলোচনা –
আরবদের কাছে “ইলাহ” কোন একক সত্তার নাম ছিলো না, বরং তারা যে সমস্ত দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করতো,
এদের প্রত্যেকের জন্য এই শব্দ প্রয়োগ করতো। আল-কুরআনের কোথাও “আল-ইলাহ” শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।
শুধু “ইলাহ” আর “আল্লাহ” শব্দের ব্যবহার হয়েছে। বিভিন্ন আয়াতে “ইলাহ” শব্দ দিয়ে ঐ সমস্ত উপাস্যের
প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, মানুষ যাদের পূজা-অর্চনা, উপাসনা ও আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে। বহু আয়াতে
আল-কুরআন দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছে যে, “ইলাহ” আখ্যায়িত হওয়ার একমাত্র অধিকার আল্লাহ’র-ই জন্য
সংরক্ষিত। তিনি এক, অদ্বিতীয় ও সমস্ত ইবাদাতের হকদার, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আল-
কুরআনের এই ঘোষণাটি শুধু আরব অঞ্চলের অবিশ্বাসীদের জন্য সীমিত নয়, এটি সমগ্র দুনিয়াবাসীর
প্রতি, যেখানে প্রতিমা পূজার বিশ্বাস ব্যাপকতা লাভ করেছিলো আর যেখানে আল্লাহ’র প্রকৃত সত্তা, তার
গুণাবলী ও অবস্থান সম্পর্কে মানব অন্তর বহুবিধ পথভ্রষ্টতার মধ্যে নিমজ্জিত ছিলো। (আল- কুরআনুল
Aytul kursi
কারীমের সংক্ষিপ্ত বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড; “ইলাহ” সম্পর্কিত আলোচনার একটি অংশ সংক্ষেপিতভাবে এখানে তুলে ধরা হলো)
আয়াতুল কুরসির তাফসীর
আল্লাহ তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই এর ব্যাখ্যাঃ
ইবনে কাসির লিখেছেনঃ অর্থাৎ তিনি সৃষ্ট জীবসমূহের একক ইলাহ বা উপাস্য। (তাফসীরে ইবনে কাসির, ২য় খণ্ড)
“তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই” – এর ব্যাখ্যায় ইবনে জারীর আত-তাবারী লিখেছেনঃ এ কালেমায় আল্লাহ
ছাড়া অন্যের ইবাদাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, আল্লাহ তো চিরঞ্জীবী, চিরস্থায়ী। তাছাড়া, তিনি
অন্যান্য গুণেরও অধিকারী, যা এ আয়াতে তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ
এমন এক সত্তা, শুধু যার জন্যই সৃষ্টির ইবাদাত নির্ধারিত। তিনি চিরঞ্জীবী ও চিরস্থায়ী। আল্লাহ ছাড়া তোমরা কারো ইবাদাত করো না।
কেননা, তিনি এমন চিরঞ্জীবী চিরস্থায়ী, যাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। এ আয়াতে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে,
যারা আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া আহকাম ও নিদর্শনাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করেছে আর তারা রাসুলগণের আবির্ভাবের পর আল্লাহ’র নিদর্শনাদির মধ্যে মতভেদ করেছে। তাদেরকে
আল্লাহ অবহিত করেছেন যে, তিনি রাসুলগণের মধ্যে কাউকে আবার কারো থেকে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন।
বান্দাগণ মতভেদ করার পর একে অন্যের সাথে বিবাদ করেছে, যুদ্ধ-বিগ্রহ করেছে, তাদের মধ্যে কেউ ঈমান
নিয়েছে, কেউ আবার কুফরী করেছে। কাজেই আল্লাহ’র জন্যই সমস্ত প্রশংসা, যিনি তার প্রতি বিশ্বাস করার জন্য
আমাদের শক্তি দান করেছেন এবং তাকে স্বীকার করার জন্য তাওফিক দিয়েছেন। (তাফসীরে তাবারী, ৫ম খণ্ড)
আয়াতুল কুরসীর তাফসীর
এ আয়াতের শ্রেষ্ঠত্ব
ইবনে কাসির তার তাফসীরে লিখেছেনঃ কুরআন শরীফের মধ্যে সবচেয়ে ফযীলতের আয়াত সম্পর্কে
সহীহ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এই আয়াতের মর্যাদা সব আয়াতের চেয়ে উচ্চে।
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ধারাবাহিকভাবে উবাইদ ইবন খাশখাশ আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, আবু যর জুনদুব ইবন জানাদাহ বলেছেনঃ
একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলে তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মসজিদে বসা দেখতে পাই আর আমিও গিয়ে তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে বসি ……..
এরপর আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আপনার প্রতি সবচেয়ে
মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাযিল হয়েছে ?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“আয়াতুল কুরসী।” ( এর পর পূর্ণ হাদিসটির শেষ অংশ উল্লেখ করা হয়েছে)
উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ধারাবাহিকভাবে আবদুল্লাহ ইবন রিবাহ ….. আহমাদ বর্ণনা করেছেনঃ
একদিন উবাই ইবন কাব’কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করেন – কুরআনের মধ্যে কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ? তিনি বলেন –
আল্লাহ ও তার রাসুল’ই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা বেশী জানেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন – আয়াতুল কুরসী।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন – হে আবুল মানযার, তোমাকে এই উত্তম জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ।
সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার আত্মা, এটির একটি জিহবা ও দুটো ঠোঁট রয়েছে যা দিয়ে সে আরশের অধিকারীর পবিত্রতা বর্ণনা করে।
আবু সালীল রহিমাহুল্লাহ থেকে ধারাবাহিকভাবে উসমান ইবন ইতাব …… আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, আবু সালীল বলেছেনঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন এক সাহাবীর সাথে লোকজন কথা বলছিলো। কথা বলতে বলতে তিনি ঘরের ছাদের উপর উঠেন।
তখন তিনি বলেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার জিজ্ঞাসা করেন যে, বলতে পারো,
কুরআন শরীফের কোন আয়াতটি সবচেয়ে বড় ? তখন জনৈক সাহাবী বললেন – اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ (এই আয়াতটি সবচেয়ে বড়)
এরপর সেই লোকটি বলেন – আমি এই উত্তর দেওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার
কাঁধের উপর হাত রাখেন আর আমি সেটির শীতলতা বুক পর্যন্ত অনুভব করছিলাম। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বুকে হাত রেখেছিলেন আর আমি সেটির শীতলতা কাঁধ পর্যন্ত অনুভব করছিলাম।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন – হে আবু মানযার, তোমাকে এই উত্তম জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ।
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ধারাবাহিকভাবে ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু ……
ইবন মারদুবিয়া বর্ণনা করেছেনঃ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার শহরতলীর কতগুলো লোককে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে দেখলেন আর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন
তোমাদের মধ্যে কেউ বলতে পারো, কুরআন শরীফের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত আয়াত কোনটি ? তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন
এটি আমার ভালো জানা আছে। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে বলতে শুনেছি যে, “اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ”
হলো কুরআনের সবচেয়ে সম্মানিত আয়াত। (তাফসীরে ইবন কাসির, ২য় খণ্ড)
আয়াতুল কুরসির তাফসির
আয়াতুল কুরসির ফযীলত
আসমা বিনতে ইয়াযীদ ইবনে সাকান থেকে ধারাবাহিকভাবে শাহর ইবন হাওশাব …… আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে,
আসমা বিনতে ইয়াযীদ ইবন সাকান বলেছেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে বলতে শুনেছি – “اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ” এবং “الم ﴿١﴾ اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ” এই দুই আয়াতে ইসমে আযম রয়েছে।
আবু ইমামা থেকে ধারাবাহিকভাবে কাসিম ইবনে আবদুর রহমান ….. ইবন মারদুবিয়া বর্ণনা করেছেন যে, আনু ইমামা বলেছেন,
“আল্লাহ’র ইসমে আযম দিয়ে দুয়া করলে তা আল্লাহ কবুল করেন। আর সেটি সূরা বাকারা, সূরা আলি ইমরান ও সূরা তো-হা’র মধ্যে রয়েছে।”
আয়াতুল কুরসি এর শানে নুযূল
দামেস্কের খতীব ইবন হিশাম ইবন আম্মার বলেছেনঃ সূরা বাকারার মধ্যে ইসমে আযমের আয়াত হলো “اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ”
সূরা আলি ইমরানের মধ্যে আয়াতটি হলো “الم ﴿١﴾ اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ” এবং সূরা তো-হা’র মধ্যে আয়াতটি হলো “وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ”।
উবাই ইবন কাবের পিতা থেকে ধারাবাহিকভাবে আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন কাব রহিমাহুল্লাহ আবু ইয়ালা আল মোসেলী রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেনঃ
উবাই ইবন কাবের পিতা তাকে বলেন – আমার খেজুর ভর্তি একটি বস্তা ছিল আর প্রত্যেকদিন আমি সেটি পরিদর্শন করতাম।
কিন্তু একদিন কিছুটা খালি দেখে রাত জেগে পাহারা দিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম যে, যুবক ধরণের কে একজন আসলো।
আয়াতুল কুরসি র তাফসির
আমি তাকে সালাম দিলাম, সে সালামের উত্তর দিলো। এরপর জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কি জীন না ইনসান ?” সে বললো – “আমি জীন।” আমি বললাম – “
তোমার হাতটা বাড়াও তো”। সে বাড়ালে আমি তার হাতে হাত বুলাই। হাতটা কুকুরের হাতের গঠনের মতো এবং কুকুরের লোমও রয়েছে। আমি বললাম – “সকল জীন কি এই ধরণের ?” সে বললো –
আয়াতুল কুরসি এর শানে নুযূল
“সমগ্র জীনের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বেশী শক্তিশালী।” এরপর আমি তাকে বললাম, “যে উদ্দেশ্যে তুমি এসেছো, সেটা তুমি কিভাবে সাহস পেলে ?”
সে উত্তরে বললো, “আমি জানি যে, আপনি দানপ্রিয়। তাই ভাবলাম, সবাই যখন আপনার নিয়ামতের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে, তাহলে আমি কেন বঞ্চিত হবো ?”
অবশেষে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমাদের অনিষ্ট থেকে কোন জিনিস রক্ষা করতে পারে ?” সে বললো, “তা হলো – আয়াতুল কুরসী।”
সকালে উঠে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে রাতের ঘটনাটি বললে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দুষ্ট তো ঠিক বলেছে।
সালমা ইবন ওয়াদান থেকে ধারাবাহিকভাবে আবদুল্লাহ ইবন হারিস ও আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, সালমা ইবন ওয়াদান বলেছেন যে,
আয়াতুল কুরসি এর তাফসির
তাকে আনাস ইবনে মালিক বলেছেনঃ একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেন
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে কি আয়াতুল কুরসী নেই ?” সাহাবী বললেন, “জ্বী, আছে।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এটিও কুরআনের এক-চতুর্থাংশ।” ( “….” এর পর পূর্ণ হাদিসটির শেষ অংশ উল্লেখ করা হয়েছে)
সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মাদ ইবন সীরীন …… উসমান ইবন হাইসাম আবু আমর বর্ণনা করেছেন যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে রমযানের যাকাতের মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। কিন্তু এক ব্যক্তি এসে তা থেকে খাদ্য তুলে নিতে থাকলে আমি তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলি।
এরপর তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে সে অনুনয় করে বললো, “আমি অত্যন্ত অভাবী, পরিবার-পরিজন অনাহারে রয়েছে।
তাই খাবারের আমার এতো প্রয়োজন যে তা অবর্ণনীয়।” এরপর আমি তাকে ছেড়ে দেই। কিন্তু সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “হে আবু হুরায়রা, রাতের বন্দীকে কি করলে ?” আমি বললাম,
আয়াতুল কুরসি এর বাংলা উচ্চারণ
“ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সে আমার কাছে পরিবারের ভীষণ অভাবের অভিযোগ করলে দয়া-পরবশ হয়ে তাকে মুক্তি দেই।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি শুনে বললেন, “সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখবে, সে আবার আসবে।”
তাই আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বলেছেন যে, সে আসবে, তখন আসবেই।
আমিও টহল দিতে থাকলাম। সত্যিই সে এসে খাদ্য নিতে থাকলে আমি তাকে পাকড়াও করলাম। এরপর বললাম, “তোমাকে এবার অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো।”
আয়াতুল কুরসি এর শানে নুযূল
সে কাকুতি মিনতি করে বললো, “আমার সংসার বড় অভাবের সংসার, আমি অত্যন্ত গরীব। আর আসবো না, আপনি আমাকে মুক্তি দিন।”
তাই আমি করুণাবশত তাকে মুক্তি দান করি। সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডেকে বললেন,
তাফসির আয়াতুল কুরসি এর
“হে আবু হুরায়রা, বন্দীকে কি করলে ?” আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমাকে তার অবর্ণনীয় অভাবের কথা বললে আমি দয়ার্দ্র হয়ে তাকে মুক্তি দান করি।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখবে, সে আবার আসবে।”
এরপর তৃতীয়বার এসেও সে খাদ্য নিতে প্রবৃত্ত হলে এবারও তাকে বন্দী করে বললাম, “তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো।
কেননা, তিনবার তোমাকে পাকড়াও করেছি, আর প্রত্যেকবার তুমি বলেছো – আর আসবো না। অথচ তুমি ওয়াদা ভেঙ্গে প্রত্যেকবারই এসেছো
আয়াতুল কুরসির ওয়াজ
(তাই তোমাকে এবার আর ছাড়বো না)।” তখন সে বললো, “আমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে এমন কতগুলো বাক্য শিখাবো, যার দ্বারা আল্লাহ আপনার কল্যাণ করবেন।”
আমি বললাম, “সেটা কি ?” সে বললো, “আপনি যখন শুতে যাবেন, তখন বিছানায় আয়াতুল কুরসী পড়বেন, অর্থাৎ – اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
এই আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহ আপনার রক্ষক হবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না।” এরপর আমি তাকে মুক্তি দেই।
এরপর সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডেকে বললেন, “গত রাতের বন্দীকে কি করলে ?”
আমি বললাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সে আমাকে উপকারী কতগুলো বাক্য শিখিয়ে দিলে আমি তাকে মুক্তি দেই।”
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কি শিখিয়েছে ?” আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “সে আমাকে বলেছে যে –
যখন আপনি শুতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসীর তখন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন, তাহলে আপনি সে রাতে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ’র হিফাযতের বহির্ভূত হবেন না,
আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ
আর সকাল পর্যন্ত শয়তানও আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না, উপরন্তু সে রাতে যা কিছু হবে সবই কল্যাণকর হবে।”
পরিশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে। তবে হে আবু হুরায়রা, জানো কি, তুমি এই তিন রাত কার সাথে কথা বলেছিলে ?”
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আমি বললাম, “না।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সে হলো শয়তান।”
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ধারাবাহিকভাবে আবু সালিহ ……. হাকাম বর্ণনা করেছেন যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সূরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি সমগ্র কুরআনের নেতা স্বরূপ।
তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। সেটি হলো আয়াতুল কুরসী।”
আবু ইমামা থেকে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মাদ ইবন যিয়াদ …… আবু বকর ইবন মারদুবিয়া বর্ণনা করেছেন যে, আবু ইমামা বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু বেহেশতে যেতে বাঁধা দেয় না।”
হাসান ইবন বাশারের সূত্রে নাসাঈ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, দিনে ও রাতে দুইবার পড়লে। (তাফসীরে ইবন কাসীর, ২য় খণ্ড)
পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে সম্পর্ক
তাফসীরকারকগণ বলেছেন, একটি বাগানে ভ্রমণ করার সময় হঠাৎ অন্য বাগানে পৌঁছে তার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে যেমন দর্শক মাত্রেরই আনন্দের সীমা থাকে না,
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
ঠিক তেমনি পবিত্র কুরআন একটি বিষয়ের বর্ণনা করতে করতে হঠাৎ অন্য একটি প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে। এতে পাঠক মাত্রই আরো
অধিক জানার আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করে। এটি পবিত্র কুরআনের বর্ণনা শৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। (তাফসীরে নুরুল কুরআন) কুরআনের বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা পড়ুন এখানে।
এ আয়াতের পূর্বের তিনটি আয়াত হচ্ছে
“এগুলো আল্লাহ’র আয়াত। আমি তোমাকে যথাযথভাবে শুনাই, আর নিশ্চয়ই তুমি আমার রাসুলগণের অন্তর্ভুক্ত।
এই রাসুলগণ। আমি তাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ তো এমন, যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন,
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর আমি মারইয়াম-পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট মুজিযা দিয়েছি আর তাকে রুহুল কুদস (অর্থাৎ, জিবরীল) দ্বারা শক্তিশালী করেছি।
Ayatul kursi ar tafsir
আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তাদের পরবর্তীরা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পর পরস্পর যুদ্ধ করতো না, কিন্তু তাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলো, ফলে তাদের মধ্যে
কেউ ঈমান আনলো, আর কেউ কাফির হলো। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পরে যুদ্ধ করতো না, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
হে ঈমানদারগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো সেদিন আসার পূর্বে –
যেদিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না। আর যারা কাফির তারাই যালিম।” (সূরাহ আল-বাকারাহ, ২ : ২৫২-২৫৪)
শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান লিখেছেনঃ আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে মিশ্রিত আকারে তিন প্রকার বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন –
Ayatul Kursi আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
(১) তার সত্তা ও গুণাবলীর একত্ব বিষয়ক জ্ঞান, (২) বিধি-বিধান এবং (৩) ইতিবৃত্ত ও ঘটনাবলী। শেষোক্তটি দ্বারাও হয়
মহান আল্লাহ’র একত্ব ও গুণাবলীকেই পরিস্ফুট করা উদ্দেশ্যে, নয়তো বিধি-বিধানের সমর্থন ও তার প্রতি গুরুত্ব আরোপের লক্ষ্য থাকে।
আবার, তাওহীদ ও গুণাবলী সংক্রান্ত জ্ঞান এবং বিধি-বিধান সম্পর্কিত আলোচনা এমনভাবে পরস্পর সন্নিবদ্ধ যে, একটি অপরটির কারণ ও নিদর্শন স্বরূপ।
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহ’র গুণাবলী হলো শরঈ বিধি-বিধানের উৎস ও মূল, এবং বিধি-বিধান হলো তার গুণাবলীর শাখা-প্রশাখা ও ফল স্বরূপ। কাজেই বলা বাহুল্য, ইতিবৃত্ত ও ঘটনাবলী
তাফসির আয়াতুল কুরসি
এবং বিধি-বিধান সম্পর্কিত জ্ঞান দ্বারা অবশ্যম্ভাবীরূপে তাওহীদ ও গুণাবলী সংক্রান্ত জ্ঞানের সমর্থন হবে এবং
তা আরো বলিষ্ঠ হয়ে উঠবে। আবার ইতিবৃত্ত ও ঘটনাবলী তাওহীদও গুণাবলী এবং বিষয়ক জ্ঞান দ্বারা
অবশ্যই বিধি-বিধানের সমর্থন হবে ও তার প্রয়োজন পরিস্ফুট হবে, বরং তার প্রকৃত রহস্য ও তাৎপর্য এবং তার মৌলিকত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
এই যে তিন পদ্ধতির এক সমন্বিত পদ্ধতি – এটি কল্পনাতীত সুন্দর, সহজ ও হৃদয়গ্রাহী। কেননা, প্রথমত বিশেষ একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে যাওয়া বিতৃষ্ণার কারণ হয়ে থাকে।
আয়াতুল কুরসি এর শানে নুযূল
একটি জ্ঞান দ্বারা অন্যটিতে স্থানান্তর যেমন উদ্যান থেকে উদ্যানান্তরে গমনের মতোই উপভোগ্য। দ্বিতীয়ত, তিনটি পদ্ধতি দ্বারা স্বরূপ, উৎস ও ফল সবই জানা হয়ে যায়।
ফলে বিধি-বিধান অত্যন্ত আগ্রহ ও উদ্দীপনা এবং পরিশ্রম ও ব্যুৎপত্তির সাথে পালন করা সম্ভব হয়, এ কারণেই তা একটি চমৎকার ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি এবং কুরআন মাজীদে বহুল ব্যবহৃত।
তাফসির ইবনে কাসির
এ স্থলেই দেখুন, প্রথমে কতগুলো বিধান কি বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। তারপর প্রয়োজন মাফিক ঘটনাবলী উদ্ধৃত করে বিধৃত বিধানসমূহের উপকারিতা ও ফলাফল যেন আমাদেরকে চাক্ষুস দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ সবের পর তাওহীদ ও সিফাত সম্পর্কিত শ্রেষ্ঠ আয়াত আয়াতুল কুরসীকে উল্লেখ করে সমস্ত বিধি-বিধানের শিকড় অন্তরে
আয়াতুল কুরসী
এমন দৃঢ়ভাবে করে দেওয়া হয়েছে যে, উৎপাটনের চেষ্টা করলেও তা উৎপাটিত হওয়ার নয়। (তাফসীরে উসমানী, ১ম খণ্ড)
মাওলানা মুহাম্মাদ ইদরীস কান্দলভী লিখেছেনঃ পূর্বের রুকুর আয়াতে (অর্থাৎ, ২৫২ নং আয়াত) রিসালাতের কথা আছে – “… আর নিশ্চয়ই তুমি আমার রাসুলগণের অন্তর্ভুক্ত”।
আলোচ্য আয়াতে (আয়াতুল কুরসীতে) তাওহীদের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
তা ছাড়া “…. আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পরে যুদ্ধ করতো না, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।” – এই আয়াতে আল্লাহ’র কুদরত ও ইচ্ছার কথা আছে। “…
যেদিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না …” – এই আয়াতে কিয়ামতের দিন বন্ধুত্ব ও সুপারিশ কাজে আসবে না এ কথাও আছে।
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
এ থেকে আল্লাহ’র বড়ত্ব ও প্রতাপের কথা জানা যায় যে, তার সামনে মুখ খোলার সাধ্য কারো থাকবে না। এ প্রসঙ্গে আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলার সত্তার একত্ব ও গুণাবলীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়।
আয়াতুল কুরসি এর শানে নুযূল
এ ছাড়া পূর্বের আয়াতে কাফিরদের যালিম বলা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে তাদের যুলুমের কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, কাফির ও মুশরিকরা যালিম,
কারণ তারা আল্লাহ’র সাথে শরীক সাব্যস্ত করে। আর তাওহীদের বিশুদ্ধ আকিদা বর্ণনা করা হয়েছে যে, হে মুসলিমগণ,
তোমরা কাফিরদের মতো শিরক করে যালিম হয়ো না, বরং তাওহীদের বিশ্বাসকে প্রাণাধিক প্রিয় বানিয়ে নাও। (মাআরিফুল কুরআন, ১ম খণ্ড)
কুরসির তাফসির
মুহাম্মাদ আলী আস-সাবূনী লিখেছেনঃ যখন আল্লাহ নবীগণের কারো উপর কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানের আলোচনা করেছেন এবং
এ কথা বর্ণনা করেছেন যে, নবীগণের পরে তাদের উম্মতগণ ধর্মের বিষয়ে মতবিরোধ করেছে এবং পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়েছে,
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
তখন আল্লাহ তাআলা এ কথা স্পষ্টভাবে শুনিয়ে দিয়েছেন যে, নবীদের মাঝে এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান তাদের অনুসারীদের মাঝে কলহ-বিবাদ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত দাবী করেনা।
আয়াতুল কুরসি এর তাফসির
কেননা, যদিও মর্যাদার বিবেচনায় রাসুলগণের পরস্পরের মাঝে পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তারা সকলেই অভিন্ন দাওয়াতের বাহক।
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আর তা হলো আল্লাহ’র একত্ববাদের দাওয়াত। সুতরাং তাদের সকলের পয়গাম অভিন্ন এবং তাদের ধর্মও অভিন্ন। (সাফওয়াতুত তাফাসীর, ১ম খণ্ড)
মাওলানা মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম লিখেছেনঃ পূর্ববর্তী কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ পাকের রাসুলগণের সম্পর্কে বিশেষ বিবরণ সন্নিবেশিত হয়েছে।
রাসুলগণের প্রধানতম কর্তব্য হলো আল্লাহ’র তাওহীদ বা একত্ববাদের বিবরণ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। তা এ আয়াতে আল্লাহ তার তাওহীদের বিবরণ এভাবে পেশ করেছেন … ।”
(তাফসীরে নুরুল কুরআন, ৩য় খণ্ড) আয়াতুল কুরসি
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী লিখেছেনঃ পূর্বের আয়াতে অনুমতি ছাড়া সুপারিশ নিষিদ্ধ হওয়া দ্বারা যেমন কিয়ামত দিবসে
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
সৎকর্মের অক্ষমতা প্রমাণিত হয়, তদ্রূপ এটি দ্বারা আল্লাহ’র প্রতাপশালী হওয়াও বুঝা যায়, অর্থাৎ, সেদিন তার সামনে মুখ খোলার সাধ্যও কারো হবে না;
আর এই মর্মের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই পরবর্তী আয়াতে, যা “আয়াতুল কুরসী” নামে আখ্যায়িত – আল্লাহ’র সত্তার একত্ব ও তার
গুণাবলীর পূর্ণতা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে খুব স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য বিকশিত হয়। (তাফসীরে আশরাফী, ১ম খণ্ড)
আয়াতুল কুরসির তাফসির
আমীন আহসান ইসলাহী লিখেছেনঃ ইতিপূর্বে জিহাদ ও আল্লাহ’র পথে ব্যয় (ইনফাক) সম্পর্কে আলোচনা চলে আসছিলো।
মাঝে প্রসঙ্গত মনোযোগ আকর্ষণ মূলক দুটো আয়াত এসেছে সতর্কীকরণ ও উপদেশ প্রদান হিসেবে। একে “জুমলা মুতারাযা” বা পূর্বাপর সম্পর্কহীন বাক্য বলা হয়।
তারপর নতুন করে পুনরায় ইনফাক সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচ্য বিষয়টিকে বুঝাবার জন্য যে প্রমাণ-পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তাতে এ কথাই প্রকাশ পায় যে,
আয়াতুল কুরসি
আল্লাহ’র নিকট যে মূল বস্তুটি কাজে আসবে তা হচ্ছে আল্লাহ’র পথে জান ও মালের কুরবানী। কিন্তু শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করা
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
লোকেরা তো এটি করার জন্য প্রস্তুত নয়। বরঞ্চ তারা আল্লাহ’র সাথে নিজেদের মনগড়া অনেক শরীক ও সুপারিশকারী বানিয়ে রেখেছে এবং তাদের সুপারিশ ও
সাহায্যের উপর ভরসা করে বসে আছে। অথচ এ মিথ্যা ভরসা ও সাহায্য কোনই কাজে আসবে না, যারা এ ধরণের বোকামির মধ্যে ডুবে আছে তারা নিজেদের উপর বিরাট যুলুম করছে।
আয়াতুল কুরসি এর তাফসির
এরপর অতি সংক্ষেপে অথচ ব্যাপক অর্থবহ ভাষায় তাওহীদের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে এবং শিরকের প্রতিবাদ করা হয়েছে। যাতে করে একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত
আশ্বাসের উপর নির্ভর করে যে লোকগুলো বেঁচে আছে তারা যেন সতর্ক হয়ে যায় এবং খোদা-পুরস্তির সঠিক পথ অবলম্বন করে। (তাদাব্বুরে কুরআন, ১ম খণ্ড)